পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করে দেবে। এটা আমার কোনও বাক্তিগত হঠকারি সিদ্ধান্ত নয়। আমাদের কার্যকরী সমিতির গৃহীত সিদ্ধান্ত। আর কেউ যদি ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেখান, সেটা ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ মেনে নিয়ে ঝাঁপ বন্ধের প্রতিজ্ঞায় অটল রইলাম। ঈশ্বরে বিশ্বাসের মৃত্যুর জন্য এই চ্যালেঞ্জ ভয়ংকর হলেও অতি প্রয়োজনীয় ছিল।

ঈশ্বর বিশ্বাসের পক্ষে কোনও একটি যুক্তি খণ্ডনে ব্যর্থ হলে যুক্তিবাদী হবার সুবাদে ঈশ্বর বিশ্বাসী হতাম-এ জাতীয় কথা শুনে কেউ যদি বিষম খান, তো তাঁর উদ্দেশে বলি—কী মুশকিল, আমরা তো ভাববাদী বা অলীক কল্পনাবাদীদের মত শাস্ত্রবাক্য বা গুরুবাকাকে অভ্রান্ত বলে ধরে নিয়ে স্থবির বা অনড় নই। যুক্তিবাদীরা নমনীয়। যে দিকে যুক্তি, সেদিকেই ঝুঁকে পড়েন। যুক্তিবাদীরা বর্তমানের সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আজ যা বলেন, আগামীকালের বাড়তি তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আজকের বক্তব্য বাতিল করার প্রয়োজন হলে আন্তরিকতার সঙ্গেই তা করেন। তবে যা করেন তা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই, ‘ভবিষ্যতে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে যেতেও তো পারে’—এমনটা ভেবে করেন না।

যুক্তিবাদীরা অনমনীয়। অনমনীয় তাদের আদর্শের প্রতি। তাদের মূল্যবোধের প্রতি। একই সঙ্গে যুক্তি ও যুক্তিহীনতায় অবস্থান করে যুক্তিবাদী হওয়া যায়। মানুষের বিশ্বাসে আঘাত না দেওয়ার পক্ষে হাজারো অজুহাত হাজির করেও নয়। এ অজুহাতের আর এক নাম ‘সুবিধাবাদ’।

কয়েকমাস আগে গণেশের দুধ খাওয়ার মত একটা তথাকথিত অলৌকিক ঘটনার লৌকিক ব্যাখ্যা হাজির করতে দেশের প্রায় প্রত্যেকটি প্রচার-মাধ্যম ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এর এক মাস পরে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘিরে গড়ে ওঠা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার-মাধ্যমগুলোর ইতিবাচক ভূমিকার জন্য তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এর আগেও এ'দেশে কুসংস্কারের ঢেউ উঠেছে। আমজনতা উদ্বেল হয়েছে। প্রচার-মাধ্যমগুলো এবারের মত ইতিবাচক ভূমিকা নেয়নি। এর আগেও পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হয়েছে। প্রচার-মাধ্যমগুলো এ'বারের মত গ্রহণ নিয়ে কুসংস্কারকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হাজির হয়নি। এ'বার হয়েছে। কারণ, এখন জনগণ শুধু কুসংস্কারের কাঁথা জড়িয়ে উষ্ণতার স্বাদ নেয় না। জনতার একটা বড়-সড় মাপের অংশ কুসংস্কার বিরোধিতার মধ্যে প্রগতির উত্তাপকে অনুভব করে। জীবনের উত্তাপকে অনুভব করে।

১০