পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সেইজন্য মনু বিধান দিয়েছেন—শূদ্রভৃত্যকে উচ্ছিষ্ট অন্ন, জীর্ণ বসন, জীর্ণ শয্যা বা ঘর দান করিবে (১০:১২৫]।
O

  প্রায় বিনাখরচে শ্রমশক্তি বিনিয়োগের প্রয়োজনেই উচ্চবিত্তেরা সৃষ্টি করেছিল ‘শূদ্র নামের বর্ণটি। আর সেই সৃষ্টির কাজে মূখ্য ভূমিকা নিয়েছিল ঈশ্বরনির্ভর ধর্ম। ধর্মের নামে, ঈশ্বরের নির্দেশের নামে সেদিন শূদ্রদের ‘মানুষ’ বলে বিবেচিত হওয়ার সব অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

 শূদ্রদের ধন উপার্জনের অধিকার ছিল, কিন্তু সেই ধন ভোগের কোনও অধিকার ছিল না। সব উপার্জিত ধনই দাস-মালিক গ্রহণ করবে, এই ছিল মনুর বিধান—ন হি তস্যাস্তি কিঞ্চিৎ স্বং ভর্ত্তৃহার্যধনো হি সঃ। [৮ঃ ৪১৬ এবং ৪১৭]

  শূদ্রদের আর তিন বর্ণ থেকে আলাদা করে যাতে চেনা যায়, এবং শূদ্ররা যেন প্রতিটি মুহূর্তে মনে রাখে তিন বর্ণের মানুষদের ক্রীতদাস হয়ে সেবা করার জন্যই তাদের জন্ম, তিন বর্ণের মানুষদের থেকে তারা ভিন্নতর জীব, মনুষ্যেতর জীব—সে জন্যে শূদ্রদের প্রতি মাসে কেশ মুণ্ডনের নির্দেশ দিয়েছেন মনু। [৫ঃ১৪০]

  ঈশ্বর-নির্দেশে শূদ্রের না ছিল নাগরিক অধিকার, না ছিল ধর্মীয় অধিকার, না অর্থনৈতিক অধিকার।

  এই স্বল্প পরিসরের আলোচনার মধ্যে দিয়েও আমাদের বুঝতে কোনও অসুবিধে হয়নি, এইসব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম আদিম মানুষের সাম্যের সমাজকাঠামোর ভিত উপড়ে ফেলে প্রতিষ্ঠা করেছিল অসাম্যের সমাজের, শ্রেণীবিভক্ত সমাজের। ধর্ম তৈরি করেছিল হুজুর ও মজুর শ্রেণী বিভাজন। তৈরি করেছিল নারী-পুরুষে বিভাজন। প্রতিষ্ঠা করেছিল শোষণের। প্রতিষ্ঠা করেছিল পুরুষতন্ত্রের।

O

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম আদিম মানুষের সাম্যের সমাজকাঠামোর ভিত উপড়ে ফেলে প্রতিষ্ঠা করেছিল অসাম্যের সমাজের শ্রেণীবিভক্ত সমাজের। ধর্ম তৈরি করেছিল হুজুর ও মজুর শ্রেণী বিভাজন। তৈরি করেছিল নারী-পুরুষে বিভাজন। প্রতিষ্ঠা করেছিল শোষণের। প্রতিষ্ঠা করেছিল পুরুষতন্ত্রের।

O

  হ্যাঁ, আবারও বলি, শোষণের জন্যেই সে সময় রাজশক্তি বা ক্ষত্রিয়দের শক্তির সঙ্গে ধর্মগুরু বা ব্রাহ্মণদের বৃদ্ধি যুক্ত হয়েছিল। ব্রাহ্মণরা, ধর্মগুরুরা এই অশুভ আঁতাত, শোষণের আঁতাত টিকিয়ে রাখতেই প্রচার করেছিল—ধর্মগ্রন্থগুলো স্বয়ং ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত। মানুষে মানুষে এই বিভাজন ঈশ্বর নির্দেশিত।

১২১