পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সায়েন্স-এর ডিরেক্টর। শ্রীবড়ুয়া পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনি বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞানের আধুনিক ‘বিগ ব্যাং’ থিওরির কথা হাজার হাজার বছর আগেই লেখা হয়েছে বাইবেলে। তাঁর কথায়, “বাইবেলে আছে, In the begining God created the heaven and the earth। আরও আছে And God said, let there be light: and there was light। ‘বিগ ব্যাং’ থিওরিও বলছে, হঠাৎ একটা বিস্ফোরণ ঘটল, তারপরই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হল। সুতরাং ‘বিগ ব্যাং’ থিওরিও যা, কনভেনশনাল গডও তা। কোনো পার্থক্য নেই।”

 বিকাশ সিংহ। সল্টলেকের ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের ভেরিয়েবল্ এনার্জি সাইক্লোট্রন সেণ্টারের ডিরেক্টর। একই সঙ্গে নিউক্লিয়র ফিজিসিস্ট এবং বিভিন্ন ধর্ম পুস্তকে খুঁজে পান আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে।

 ‘বিগ ব্যাং’ থিওরির প্রসঙ্গে বিকাশবাবুর অভিমত, “মহাভারতে কৃষ্ণ অর্জুনকে যে বিশ্বরূপ দর্শন করিয়েছিলেন, তার সঙ্গে বিজ্ঞানের চিন্তাধারার অনেক মিল আছে। বিশ্ব সৃষ্টির আগে যে মহাতেজ ছিল, সেই মহাতেজ কোথা থেকে এসেছিল, বিজ্ঞানী হিসেবে তার উত্তর আমার জানা নেই। (যাকে ‘বিগ ব্যাং’বলি—তার আগে কী ছিল, বিজ্ঞান সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না।) দার্শনিক হিসেবে আমি স্বীকার করতে রাজি আছি, ঈশ্বরই সেই তেজ সৃষ্টি করেছিলেন—এবং তারপর মহাভারতে বিশ্বরূপদর্শনের যে বর্ণনা পাই, সেই বর্ণনার সঙ্গে পনের শ কোটি বছর আগেকার ঐ বিস্ফোরণের দৃশ্যের অনেকখানি মিল খুঁজে পাওয়া যায়।”

 ইণ্ডিয়ান ন্যাশান্যাল সায়েন্স আকাদেমির সিনিয়র সায়েণ্টিস্ট মৃণালকুমার দাশগুপ্তও মনে করেন, এই মহাবিশ্ব বিষয়ে আজকের বিজ্ঞান যে সব সিদ্ধান্তে পোঁচেছে, সে সব কথা হাজার হাজার বছর আগেই বলে গেছে বেদ ও উপনিষদ। তাঁর কথায় “এই বিশ্বসৃষ্টি সম্বন্ধে আমাদের বেদ ও উপনিষদে যে কথা আছে, আজকের বিজ্ঞানের সঙ্গে তা অনেকখানি মিলে যায়। বিশ্বসৃষ্টি সম্বন্ধে আজকের বিজ্ঞান যে কথা বলছে, আমাদের উপনিষদ বহুকাল আগে প্রায় সেই কথাই বলে গেছে।”

 মৃণালবাবু খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ওপেনহাইমারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “ওপেনহাইমার তো গীতার বিশ্বরূপ দর্শনে একেবারে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের তেজ দেখে তিনি গীতা থেকে আবৃত্তি করেছিলেন—

দিবি সূর্য্যসহস্রস্য ভবেদ্ যুগপদুত্থিতা।
যদি ভাঃ সদৃশী সা স্যাদ্ ভাসস্তস মহাত্মনঃ।”

 মৃণালবাবু বোঝাতে চেয়েছেন—হিন্দু ধর্মচিন্তার মধ্যে নিহিত রয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানের নানা সিদ্ধান্ত।


 ২২ এপ্রিল ’৯৫-এর ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হৃষীকেশ সেন-এর ‘বিজ্ঞান

১৩২