পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গোরাচাঁদবাবুর এমন বক্তব্যকে কাঁধ থেকে পোকা ঝাড়ার মতই ঝেড়ে ফেলেছেন বি. ডি. নাগচৌধুরী, পাল্টা যুক্তির টোকায়। বি. ভি.'র পুরোটা বাসন্তীদুলাল, তবে বি. ডি. নামেই বেশি পরিচিত। ডঃ নাগচৌধুরী সাহা ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়র ফিজিক্সের ডিরেক্টর ছিলেন। ছিলেন দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ছিলেন দেশের প্রক্রিরক্ষামন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা। ভারতের পরমাণু বোমা তৈরির ক্ষেত্রে ডঃ নাগচৌধুরীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতির চূড়োয় উঠেছেন। বিদেশের বিজ্ঞানীদের কাছেও অতিপরিচিত একটি নাম।

 ডঃ নাগচৌধুরীর যুক্তি, “সুপারন্যাচারাল ফোর্সেরও তো প্রমাণ চাই। প্রমাণ না পেলে বিজ্ঞানী হিসেবে আমি মানি কী করে? বিজ্ঞানে অনেক রকম এনার্জির কথা বলা হয়েছে। একটা এনার্জি আর একটা এনার্জিতে ট্রান্সফার করা যায়, তাকে বলে ট্রান্সফর্মেশন অব এনার্জি। আমি যদি সুপারন্যাচারাল ফোর্স বা এনার্জির কথা ধরি, তাহলে কোন এনার্জিকে সুপারন্যাচারাল এনার্জিতে ট্রান্সফর্ম করব? আবার সুপারন্যাচারাল এনার্জিকেই বা কোন্ এনার্জিতে ট্রান্সফর্ম করা সম্ভব হবে? সুতরাং ঈশ্বরকে সুপারন্যাচারাল ফোর্স হিসাবেও ভাবতে পারি।”

O

যদি সুপারন্যাচারাল ফোর্স বা এনার্জির কথা ধরি, তাহলে কোন্ এনার্জিকে সুপারন্যাচারাল এনার্জিতে ট্রান্সফর্ম করব? আবার সুপারন্যাচারাল এনার্জিকেই বা কোন্ এনার্জিতে ট্রান্সফর্ম করা সম্ভব হবে? সুতরাং ঈশ্বরকে সুপারন্যাচারাল ফোর্স হিসাবেও ভাবতে পারি না।”

O

 গোরাচাঁদবাবুর জবানীতে, “রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ সুপারম্যান ছিলেন জানি, অতি সাম্প্রতিক কালে সীতারামদাস ওঙ্কারনাথজীর কথাও শুনেছি। শুনেছি তাঁদের বহু অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। থাকতেই পারে, কারও ক্ষমতা থাকতেই পারে—নইলে এত লোক তাঁদের কাছে ছোটে কেন?”

 তাঁর এই তিনটি বাক্যের বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাচ্ছি এক: গোরাচাঁদবাবু জানতেন, রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। কীভাবে জানতে পেরেছিলেন? কীভাবে ওঁদের অলৌকিক ক্ষমতা বিষয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন? দুই: “নইলে এত লোক তাঁদের কাছে ছোটে কেন?”—কী সহজ-সরল উত্তর! যুক্তির পরিবর্তে সংখ্যাগুরুদের মতামতে কী গভীর বিশ্বাস! আঃ হাঃ এমন সংখ্যাতত্বে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীদের কৃপাতেই সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর ঘোরা আটকে ছিল শত-সহস্র বছর।

 বিশাস যদি 'ডগমা' হয়, অর্থাৎ যুক্তিনির্ভর না হয়ে বদ্ধমূল ধারণার উপর গড়ে ওঠে, তখন তা অন্ধ হয়ে যায়। গোরাচাঁদবাবু পেশায় বিজ্ঞানী হলেও

১৬১