পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মত কথায় আমার বন্ধু মিস্টুন বলেছিলেন, “আমাদের পাড়ার ফুচকাওয়ালা ঝুন্নু বলে, ও নাকি এক রকম পাতার রস খাইয়ে বেশ কয়েকজন এইডস রোগীকে একদম সারিয়ে দিয়েছে! কোন গাছের পাতার রস খাওয়ায়? না, ঝুন্নু এ'বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। বলে, 'এতবড় আবিস্কারটা আমি বলি, আর তোমরা ফোকটাই নাম কেন। নোবেল প্রাইজ দিলে তবে নাম বলব।' ভাল হয়ে যাওয়া রোগীদের নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেই হাসে আর বলে, 'আমি কি পাগল যে রোগীদের নাম বলব? ওদের নাম বলি, আর পাবলিক ওদের পিছনে লেগে পড়ুক?' এতদিন ঝুন্নুকে আধা-পাগলা ভাবতাম। এখন তোমার মুখে বীরেন্দ্রবিজয়বাবুর কথা শুনে মনে হচ্ছে, এভাবে ঝুন্নুর দাবিকে উড়িয়ে দেওয়াটা আদৌ ঠিক নয়। কারণ, ঝুন্নুর এইডস সারাবার ক্ষমতা আছে কি নেই, বিজ্ঞান এখনও প্রমাণ করতে পারেনি। এই যুক্তিতে ঝুন্নুকে এইডসের ওষুধের আবিস্কারক হিসেবে সত্যিই নোবেল প্রাইজ দেওয়া যেতেই পারে। বীরেন্দ্রবাবুর বিজ্ঞানী হিসেবে আন্তর্জাতিক নাম আছে। উনি এ ব্যাপারে ঝুন্নুকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন। বীরেন্দ্রবাবু তাঁর অকাট্য যুক্তিতে নিশ্চয়ই নোবেল পুরস্কার কমিটিকে প্রভাবিত করতে পারবেন। আর তারপর যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার আনবে ঝুন্নু ফুচকাওয়ালা। ঝুন্নু ও নোবেল পুরস্কার—এই দুয়ের মধ্যে যে দূরত্ব, সেটা ঘোচাতে এখন শুধু দরকার, বীরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে ঝুন্নুর আলাপ করিয়ে দেওয়া।”

 ‘ঐশ্বরিক ক্ষমতা' বলে কিছু আছে কি নেই, বিজ্ঞান যদি প্রমাণ করতে পারত, তা হলে কী হত? বীরেন্দ্রবাবুর কথায়, “তাহলে প্রমাণ হয়ে যেত ঈশ্বর আছেন। ঈশ্বর থেকেই তো ঐশ্বরিক! ঈশ্বর না থাকলে ঐশ্বরিক হয় কী করে?”

 ভাল! ভাল! কিন্তু এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বীরেন্দ্রবাবু প্রকারান্তরে এ'কথাও স্বীকার করলেন—অবতার নামে চিহ্নিতদের কেউই আজ পর্যন্ত তাঁদের ঐশ্বরিক ক্ষমতা প্রমাণ করতে পারেননি। তেমনটা পারলে তো ঈশ্বরের অস্তিত্বও সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়ে যেত।

 ঐশ্বরিক ক্ষমতার অস্তিত্ব বিষয়ে বীরেন্দ্রবাবুর দৃঢ় প্রত্যয়ের ভিত্তিভূমি প্রমাণইীন, যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বস–এ কথা রূঢ় শোনালেও সত্যি।

 বীরেন্দ্রবিজয়ের কথায়, “হয়তো মহাপুরুষরা সাধনার দ্বারা তাঁদের মস্তিষ্ককে অনেক বেশি কাজে লাগাতে পারেন। তাতে তাঁদের ক্ষমতা বেড়ে যায়, তখন তাঁরা অনেক অসাধারণ কাজ করতে পারেন। এমন কি ভবিষ্যৎও দেখতে পারেন। বিজ্ঞানের দিক দিয়ে তা অসম্ভব কিছু নয়।”

 শুরুই 'হয়তো' দিয়ে কেন? তাহলে একথাও তো বলা যায়—“হয়তো সাধনার দ্বারা অসাধারণ কাজ বা ঐশ্বরিক ক্ষমতার প্রকাশ আদৌ সম্ভব নয়"।

 'হয়তো', 'যদি', 'তবে' দিয়ে বীরেন্দ্রবাবুর এই ঐশ্বরিক ক্ষমতার পক্ষে

১৬৩