কারণ, ঈশ্বর বলতে সকলে তো এক জিনিস বোঝেন না! ঈশ্বর সম্বন্ধে এক-একজনের ধারণা এক এক রকম! এমন কি একটা ধারণাকে মেনে নিলে অন্য ধারণাকে বাতিল করতে হয়; এছাড়া উপায় থাকে না। ঈশ্বর সংক্রান্ত ধারণায় ধারণায় এমন ঠোকা-কুকির মধ্যে কোন্ ধারণাটা আপনার জানাটা একান্তই জরুরী হয়ে পড়ে।
আজ আমরা একটা যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি—যখন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রশক্তি, প্রচারমাধ্যম ও ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা পৃথিবী জুড়ে প্রচারে নেমেছে ঈশ্বর আর বিজ্ঞানের দীর্ঘ সংঘর্ষ এত দিনে শেষ হচ্ছে। বিজ্ঞান মেনে নিচ্ছে ঈশ্বরকে।
বিজ্ঞানীদের মধ্যে ঈশ্বর বিশ্বাসীর সংখ্যা শতকরা কত ভাগ? (বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী পল ডেভিস জানিয়েছেন, তিনি কৌতূহলবশত এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন, পাশ্চাতের বিজ্ঞানীদের মধ্যে ঈশ্বর বিশ্বাসীর সংখ্যা এতই কম যে, শতকরা হিসেবে আসেন না।) তবু প্রশ্ন থাকে, বেশির ভাগ বিজ্ঞানী ঈশ্বর মানলেই বাস্তবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় কি না, বা বিজ্ঞান ঈশ্বরের অস্তিত্ব মেনে নিয়েছে—বলা যায় কি না (মানার মধ্যে যুক্তি প্রমাণ থাকতে পারে, আবার অনেকসময় আমরা মানি যুক্তি প্রমাণ ছাড়া)? এ'জাতীয় কৃট প্রশ্নে না গিয়েও আমরা বলতে পারি—এ যাবৎ যে দীর্ঘ বিশ্লেষণ ঈশ্বর প্রসঙ্গে আমরা করেছি, তাতে এটা অতি স্পষ্ট যে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান-রাষ্ট্রশক্তি-প্রচারমাধ্যমগুলোর বিশাল প্রচারের পুরোটাই ফাঁপা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারি, গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে সোচ্চারে বলতে পারি, ঈশ্বর আর বিজ্ঞান, দু’য়ের দূরত্ব আগেও অপরিসীম ছিল, আজও অপরিসীমই আছে। ঈশ্বর আগেও বিশ্বাস নির্ভর ছিলেন, আজও বিশ্বাস নির্ভরই আছেন। “ঈশ্বর আর বিজ্ঞানের দীর্ঘ সংঘর্ষ এত দিনে শেষ হচ্ছে"—কথাটা অবশ্য উড়িয়ে দেবার মত নয়, বরং কথাটায় বিশ্বাস করতেই মন চাইছে। এমনটা চাওয়ার পিছনে জোরালো যুক্তিও আছে। ঈশ্বর বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি সংগ্রহে আন্তরিক ছিলাম। এ বিষয়ে অকুণ্ঠ সহযোগিতা করেছে আমার সহযোদ্ধারা এবং প্রচার মাধ্যমগুলোর খোঁচা। প্রতিটি যুক্তিই খণ্ডিত হয়েছে বলাই বাহুল্য। এর অনিবার্য পরিণতি—ঈশ্বরে বিশ্বাসের মৃত্যু। এরপর আমরাও সোচ্চারে ঘোষণা করছি, “ঈশ্বরের বিশ্বাসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর ও বিজ্ঞানের দীর্ঘ সংঘর্ষ এত দিনে শেষ হচ্ছে"।
O
১৬৬