পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আর এক দিক থেকে ভাবুন—অতিপ্রাকৃত শক্তি (যা কি না ঈশ্বর) যে আছেন, তার তো প্রমাণ চাই! যুক্তিহীন ও বিশ্বাস-নির্ভর গোলা-গোলা কথার মাঝখানে মাঝখানে বিজ্ঞানের কিছু 'টার্ম' যোগ করে কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করা যেতে পারে, কিন্তু তা কখনই প্রমাণ হয়ে উঠতে পারে না। বিজ্ঞান নির্ভর প্রমাণের ক্ষেত্রে 'বিজ্ঞান' অনুপস্থিত থাকলে তো চলবে না! বিজ্ঞান হল সেই জ্ঞান যা পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ যুক্তি ইত্যাদি দ্বারা পরিচালিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। বিজ্ঞানে অনেক রকম শক্তি বা এনার্জির কথা রয়েছে। একটা শক্তিকে আর একটা শক্তিতে ট্রান্সফর্ম করা যায়। আমি যদি অতিপ্রাকৃত শক্তির কথা ধরি, তাহলে কোন্ শক্তিকে অতিপ্রাকৃত শক্তিতে ট্রান্সফর্ম করব? আবার অতিপ্রাকৃত শক্তিকেই বা কোন শক্তিতে ট্রান্সফর্ম করা সম্ভব হবে? এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত অতিপ্রাকৃত শক্তি বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব মানা বিজ্ঞানের পক্ষে অসম্ভব।


নয়: দেব-দেবীদের মূর্তি কি ঈশ্বরের মডেল বা প্রতীক?

 ঈশ্বর-বিশ্বাসী বহু বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী এই বিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্নে দাঁড়িয়ে তিনপো ঈশ্বর-বিশ্বাসের সঙ্গে এক-পো প্রগতিশীলতা মিশিয়ে বলেন-ঈশ্বরের মূর্তি হল একটা 'মডেল' বা 'প্রতীক'। যাঁরা নিরাকার ভেবে তাঁর উপাসনা করেন, তাঁরাও এই ধরনের মডেল বা প্রতীককে উপাসনা করে ঈশ্বরোপলব্ধির পথে অগ্রসর হন।

 অর্থাৎ, দেব-দেবীদের মূর্তি প্রতীক বা মডেল মাত্র। বাস্তবে তা কখনই আকার ধারণ করতে পারে না।

 বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যাঁরা এই ধরনের যুক্তি হাজির করেন, তাঁরা হিন্দু বাঙালি হলে একটি বার জিজ্ঞেস করুন-“তাহলে রামকৃষ্ণদেবের মা-কালী দেখার ব্যাপারটা আপনি একেবারেই 'বোগাস' বলছেন?” অমনি দেখতে পাবেন, ওদের একপো প্রগতিশীলতা মুহূর্তে ভ্যানিস হয়ে স্ববিরোধিতার মুর্খতা প্রকট হয়ে ওঠেছে। ওঁরা একই সঙ্গে ঈশ্বরের মূর্তিকে ‘মডেল’ বলেন এবং রামকৃষ্ণের কালী দেখা, কালীর সঙ্গে কথা বলাকেও 'সত্যি' বলেন। অঞ্চল ও ভাষার ভিত্তিতে রামকৃষ্ণের স্থান নেন অন্য কোনও অবতার—যাঁরা একইভাবে ঈশ্বর দেখার দাবিদার।

 ঈশ্বর ধারণাকে স্পষ্ট করতে স্পষ্ট সংজ্ঞা চাই—দেব-দেবীর মূর্তি কি ‘প্রতীক' মাত্র? না কি বাস্তব সত্য?


দশ: ঈশ্বর কি শক্তি, না মানুষের মতই চিন্তা করতে পারেন?

 অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ আছেন, বহু ঈশ্বর-বিশ্বাসী বিজ্ঞানী আছেন, যাঁদের ধারণায়, ঈশ্বর একটা শক্তি এবং তন্ত্রে-মন্ত্রে-ধ্যানে ঈশ্বরকে তুষ্ট করে মানসিক জোর, শক্তি পথনির্দেশ ইত্যাদি পাওয়া যায়।

১৭৩