পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ভাবুন না, আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থাকেই উদাহরণ ধরে নিয়ে ভাবুন। বিচারক একজন অপরাধীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ পেয়ে নিশ্চিত হলেন, সে একজন বালিকাকে খুন করেছে। অপরাধী বিচারকের তুষ্টি সাধন করে যদি নিজের শাস্তিকে লঘু বা লাঘব করতে সক্ষম হয়, তারপরও কি আমরা বিচারককে ‘ন্যায়পরায়ণ' বলব? না কি বলব 'দুর্নীতিগ্রস্ত'? আমাদের চোখে যা ‘দুর্নীতি', অপরাধীর চোখে তা ‘দয়া' বলে মনে হতে পারে। এই ‘দয়া'-ই ‘ন্যায়'-এর প্রতিবন্ধক। একই সঙ্গে 'দয়ালু' ও 'ন্যায়পরায়ণ' হওয়া সম্ভব নয়। ঈশ্বর বিশ্বাসীরা স্পষ্ট সংজ্ঞা দিন—ঈশ্বর 'দয়ালু' অথবা 'ন্যায়পরায়ণ’।


 ঈশ্বর ‘দয়ালু' না 'ন্যায়পরায়ণ' এই প্রশ্নের উত্তরে তিনটি প্রধান ধর্মের তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের কী জবাব আমি পেয়েছিলাম, আপনাদের সামনে তা তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না।

 মাদার টেরিজা তখনও নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি। তবে, পাবেন পাবেন করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও বেতার মন্ত্রকের পত্রিকা 'ধনধান্যে'র হয়ে মাদারের কাজ-কর্মের উপর কিছুটা হদিস পেতে হাজির হয়েছিলাম টেরিজার কাছে। এক সময় টেরিজা আশীর্বাদের ভঙ্গিতে দু'হাত তুলে বলেছিলেন, “যিশু তোমাদের মঙ্গল করুন।”

 জিজ্ঞেস করেছিলাম, “যিশু কি সত্যিই দয়ালু?”

 —“নিশ্চয়ই। উনি পরম দয়ালু, পরম মঙ্গলময়।”

 —“যিশু কি ন্যায়পরায়ণ?”

 —“নিশ্চয়ই। যিশু ন্যায়ের প্রতীক।”


 সালটা ১৯৯০। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা বক্সার ক্যাসিয়াস ক্লে মহম্মদ আলিতে রূপান্তরিত। আল্লায় নিবেদিত প্রাণ। আল্লাহর গুণকীর্তনে উৎসর্গ করেছেন নিজেকে। ডিসেম্বরের শীতেও সাংবাদিকদের ঘাম দুটিয়ে দিয়েছিলেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইঞ্চি চারেক শূন্যে উঠে গিয়ে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, না ম্যাজিক নয়। আল্লার কৃপায় শূন্যে ভেসে থাকছেন।

 দু’হাত দূরে দাঁড়িয়ে ভিড় করা সাংবাদিকরা যা দেখছেন, তা কোনও স্টেজে দেখাননি আলি। দেখিয়েছিলেন কলকাতার তাজ বেঙ্গল হোটেলের লাউঞ্জে। এই শূন্যে ভাসার পিছনে আল্লার কৃপা, না লৌকিক কৌশল কাজ করেছিল, সেটা খুজে বের করতেই আমি তাজ বেঙ্গলে গিয়েছিলাম 'আজকাল' পত্রিকার তরফ থেকে।

 কারণটা খুজে বের করে সাংবাদিকদের সামনে একইভাবে শূন্যে ভেসে ছিলাম। প্রমাণ করেছিলাম আলির শূন্যে ভেসে থাকার পিছনে আল্লার কৃপা ছিল না, ছিল লৌকিক কৌশিল। সে খবরও ছবি সহ প্রকাশিত হয়েছিল

১৭৮