পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
‘ধর্ম' যেখানে ‘গুণ', মূল্যবোধ যেখানে 'মানবতা'

 ‘ধর্ম যেখানে অলীক চিন্তায় নুব্জ নয়, বেঁধে দেওয়া আচরণবিধিতে বন্দি নয়, স্থবির অনড় মূল্যবোধের শৃঙ্খলে শঙ্খলিত নয়, ধর্ম যেখানে ‘বৈশিষ্ট্য' বা 'গুণ', 'ধর্ম' যেখানে মনুষত্ব' বা 'মানবতা' সেখানেই ‘ধর্ম' শব্দটি অর্থবহ ও সার্থক হয়ে ওঠে।

 যুক্তির পথ হাঁটা মানবতাবাদী মানুষের 'মূল্যবোধ' কোনও ছক বাঁধা বিধান নির্ভর হতে পারে না। সময় ও সমাজ অনুসারে মূল্যবোধ পাল্টায়। মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা পশ্চাৎমুখিতার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যবোধও পাল্টে যায়।

 প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিধান মেনে যিনি জীবনকে চালিত করেন, তিনি ধার্মিক। 'ধার্মিক মানুষ' সমাজ সচেতন মানুষদের চোখে আদর্শ মানুষ হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তার মানে এই নয় যে, 'নাস্তিক মানুষ' অর্থাৎ ঈশ্বর, আত্মা ও ধর্মীয় বিধানে অবিশ্বাসী মানুষ মানেই আদর্শ মানুষ (অবশ্য হিন্দু ধর্মের বিধান-দাতা মনুর কথা মত—যে 'শ্রুতি' ও ‘স্মৃতি’র একটিকেও অবজ্ঞা করে, তাকে বেদবিরোধী ও নাস্তিক বলে গণ্য করতে হবে। ফলে হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস মতে “হিন্দু ভিন্ন অন্যানা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসী মাত্রেই 'নাস্তিক')।

 ‘আদর্শ মানুষ' হতে গেলে মানুষটিকে যেমন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে, তেমনই ‘মানবিক মূল্যবোধ' দ্বারা নিজের আচরণবিধিকে পরিচালিত করতে হবে।

O

‘আদর্শ মানুষ' হতে গেলে মানুষটিকে যেমন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম থেকে বিভিন্ন হতে হবে, তেমনই 'মানবিক মূল্যবোধ' দ্বারা নিজের আচরণবিধিকে পরিচালিত করতে হবে।

O

 মূল্যবোধ' শব্দটি বাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও শব্দটির অর্থ বা সংজ্ঞা অনেকের কাছেই অধরা। সত্যি বলতে কি, প্রায়শই শব্দটি ব্যবহারকারিদের কাছেও অধরা। তাই মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা এক্ষেত্রে অতি প্রাসঙ্গিক।

 'মূল্যবোধ’ শব্দটি 'মূল্য' এবং 'বোধ’ শব্দদুটির সমষ্টি। 'মূল্য' বলতে আমরা সাধারণভাবে বুঝি কোনও কিছুর সঙ্গে মুদ্রার বিনিময় হার। কিন্তু আমরা যদি বলি—'পথের পাঁচালী' বিদেশ থেকে সম্মান আনার আগে আমরা সত্যজিৎ রায়ের প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছিলাম, এই বাক্যটির ক্ষেত্রে মূল্য শব্দটি মুদ্রার বিনিময় হার হিসেবে প্রয়োগ করা হয়নি। এখানে মূল্যায়ন শব্দটি ‘যোগ্যতা নিরূপণ' অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

 ‘বোধ’ শব্দের অর্থ “জ্ঞান', 'বুদ্ধি', 'চৈতন্য’, ‘বোঝ।' অর্থাৎ কোনও ঘটনা মস্তিষ্ক-স্নায়ুকোষে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে-তাই হল সে সম্পর্কে আমাদের বোধ।

১৯১