পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কি মৃত্যুর সম্ভাবনাও বাড়বে। বিমানের কোনও অংশ কম ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা অক্ষত থাকলে, ওই অঞ্চলে যাত্রীদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনাও কম থাকবে। এরই পাশাপাশি দুর্ঘটনার মুহূর্তে যাত্রীর কোমরের বেল্ট বাঁধা ছিল কি না, যাত্রীর থেকে বাইরে বেরবার দরজা কতটা দূরে ছিল, যাত্রী সেই সময় কীভাবে অবস্থান করছিল, যাত্রীর মানসিক ও হার্টের অবস্থা এবং আরও বহুতর কারণই যাত্রীর মৃত্যু হওয়া এবং না হওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এবং এগুলো নেহাতই ঘটনা বই বাড়তি কিছু নয়।

 লঞ্চ বা নৌকোডুবি হচ্ছে। মানুষ মরছে। লঞ্চ বা নৌকোডুবির ক্ষেত্রে ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস যেমন অনেক সময়ই কারণ, তেমনই বেশিরভাগ সময়ই কারণ হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতার বেশি যাত্রী-বহন (অন্তত আমাদের দেশের ক্ষেত্রে)। প্রশাসনের গাফিলতি, অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থার জন্যই যাত্রীরা প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়েই নৌকোয় উঠতে বাধ্য হন। অনেক সময়ই বহন ক্ষমতার দেড়-দুগুণ যাত্রী ওইসব লঞ্চ ও নৌকোয় তোলা হয়। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটে। কেউ বাঁচেন। অনেকেই মারা যান। এই বাঁচা-মরার ক্ষেত্রেও যাত্রীর সাঁতার জানা না জানা, এবং ডোবার সময় যাত্রীর অবস্থান, ডোবার সময় কাছাকাছি অন্য নৌকো ও লঞ্চের হাজির থাকা না থাকাও অবশ্যই একটা প্রয়োজনীয় বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু এই পরিবহনের সমস্যা মেটাবার ব্যবস্থা যদি প্রশাসন করে, তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেশি যান্ত্রীবহনের জন্য নৌকো বা লঞ্চডুবিতে মারা যাওয়া বা বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর ‘ঈশ্বর নির্ধারিত ভাগ্য' পাল্টে যেতে বাধ্য। তখন কোনও ধর্মের কোনও ঈশ্বরেরই সাধ্য হবে না ‘ডুবিজনিত’ বাঁচা-মরা নিয়ন্ত্রণ করা—কারণ নৌকোই তো তখন ডুববে না।

 ঝড় বা জলোচ্ছাসজনিত দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসন যদি আবহাওয়া বিষয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহে সচেতন হয় এবং সময়মত নৌকো ও লঞ্চগুলোকে বিপদ সংকেত দেয়, তবে আবহাওয়াজনিত দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

 এবার আসুন আমরা লটারিতে ঢুকি। লটারি, তা সে পাড়ার ক্লাবের লটারিই হোক, আর কোটি কোটি টাকা বাজেটের লটারিই হোক, তাতে একটা নম্বর প্রথম পুরস্কার দেওয়ার জন্য তোলা হবেই। বহুর মধ্যে থেকে কয়েকটি নম্বর তুলে এইসব নম্বরের টিকিট মালিকদের পুরস্কৃত করার ওপরেই লটারি ব্যবসা দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রথম পুরস্কার এমনই একটি তোলা নম্বর। এই তোলা টিকিটের একজন ক্রেতা থাকবেই। তাকেই দেওয়া হবে প্রথম পুরস্কারটি। এটি একটি পদ্ধতির মাধ্যমে বেরিয়ে আসা ঘটনা মাত্র। অর্থাৎ, মোদ্দা কথায়, স্রেফ একটি ঘটনা মাত্র, এর বেশি কিছুই নয়। যত বেশি বেশি করে নতুন নতুন লটারি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, যত বেশি বেশি করে লটারি মাসের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে পাক্ষিক, সাপ্তাহিক বা দৈনিক হবে, ততই বেশি বেশি করে মানুষ এই সব লটারির পুরস্কারও পেতে থাকবে। অর্থাৎ ঈশ্বর-লীলায়

২০