হানিফের সারা শরীর কালীবর্ণ। মুখ থেকে গ্যাঁজলা। হানিফকে বাঁচানো গেল না। সাপের কামড়কে ইঁদুরের কামড় বলে গভীর বিশ্বাস করলে বিষক্রিয়াও থেমে যায়।”
এ’জাতীয় গল্প আমার মত, আপনাদেরও অনেকেরই শোনার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আছে। এ’সব গল্পে সারবত্তা না থাকলেও বহু মানুষকে আবেগে আপ্লুত করার ক্ষমতা যথেষ্টই। অথচ দেখুন, অতি সাধারণ ও স্বাভাবিকভাবে উঠে আসা যুক্তির আঘাতেই এই সব গল্পের পাহাড় রেণু বেণু হয়ে যায়।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, সেখানে এবার আমরা ফিরে যাব। সেখানে হুজুর সাঈদাবাদীর বক্তব্যের উত্তরে আমি সে কথাই বলেছিলাম, যা আপনিও বলতেন। বলেছিলাম, “এ’পার বাংলায় বা ওপার বাংলায় বিঘে প্রতি যে পরিমাণ ফসল হয়, তার বহুগুণ বেশি ফসল হয় ইউরোপের প্রতিটি দেশে, আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায়, এমন কি এই মহাদেশের জাপানেও। ওরা কেউই আল্লাহের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না। তবু আল্লায় বিশ্বাসী দু’বাংলার মুসলিম চাষীদের চেয়ে বেশি ফসল ফলায়। এমন কি মজা হল এই যে, ইউরোপে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসহীন ব্যক্তিরা সংখ্যাগুরু হওয়া সত্ত্বেও ও’সব দেশে বিপুল সংখ্যক আস্তিক অধ্যুষিত দু’বাংলার চেয়ে ফসল উৎপাদন অনেক বেশি এবং মহামারির সংখ্যাও অনেক কম। এর কারণ, বিজ্ঞানকে ওসব দেশ কৃষিকাজে ও শারীরবিজ্ঞানে বেশি বেশি করে কাজে লাগিয়েছে। উৎপাদনহীনতা, অভাব, শোষণ, রোগ, মহামারি, এর কোনওটির জন্যই ঈশ্বরজাতীয় কোনও কিছুতে বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের সামান্যতম ভূমিকা নেই।
“হুজুর সাহেব, আপনি মক্কায় গিয়েছেন?”
—“হ্যাঁ।” হুজুর সাহেবের তৎপর উত্তর।
—“কিসে গিয়েছিলেন? জাহাজে না প্লেনে?”
—“প্লেনে।”
—“কেন, প্লেনে যেতে গেলেন কেন? আপনি আল্লাহের প্রিয় ভক্ত। আপনি আল্লাহে পরম বিশ্বাসী, কেন এই বিশ্বাস রাখলেন না, আপনি চাইলে চোখের নিমেষে আল্লাহ আপনাকে মক্কায় পৌঁছে দেবেন? বেশ তো, সেই সময় যদি অমন সোজা কথাটা মনে নাই পড়ে থাকে, এর বাংলাদেশে ফেরার সময় আল্লাহের কাছে আবেদন রাখুন না, সপারিষদ আপনাকে চোখের নিমেষে ঢাকায় পোঁছে দেবার। এতে বিশ্বাসের ক্ষমতার পরীক্ষা নেবার পাশাপাশি প্লেনের ভাড়া ও সময় দুই-ই বাঁচবে।”
তার পরও কিন্তু হুজুর সাঈদাবাদী প্লেনেই ঢাকা ফিরেছেন। আমি জানি, আল্লাহে বিশ্বাসের ক্ষমতার দৌড় হুজুর সাহেবের ভাল মতই জানা আছে। মুখে যা বলেন, সে কথায় আদৌ বিশ্বাস করেন না। তাঁর ব্যবহারই এ কথা আমাকে বুঝিয়ে দিল।