পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জন্য মন্তিক স্নায়ুকোষের অনেক বিচিত্র কর্মকাণ্ডকে আমরা ভূত-ভগবান ও অলৌকিকত্বের পরম লীলা বলে গ্রহণ করেছি।

O

 এই প্রসঙ্গে আর একটা ঘরোয়া উদাহরণ টানা যাক। আপনি হয়ত সকালবেলা চায়ের কাপটা নিয়ে ইজিচেয়ারে বসে আয়েস করে চা খেতে খেতে গভীর মনোযোগের সঙ্গে খবরের কাগজটা পড়ছেন। পড়ছেন এক অলিম্পিয়ানের ড্রাগ নেওয়া নিয়ে খেলোয়াড়, চিকিৎসক ও কোচদের নানা মতামত। এমন সময় আপনার জীবনসঙ্গিনী বাজারে থলিটি নিয়ে হাজির হলেন। বললেন, “আজ কিন্তু চা আনতে হবে। দু'শো গ্রাম হলুদের গুঁড়ো আনবে। একশো ইসবগুলের ভুসি।”

 আপনি কাগজের পাতায় চোদ্দ আনা মন রেখে দিয়ে মুখে “হুঁ...হুঁ...করে চলেছেন, কাগজে পুরোপুরি মন দিতে অসুবিধা হচ্ছে বলে ব্যাপারটার জের টানতে বললেন, “আর কিছু লাগবে না তো, ঠিক আছে ব্যাগটা এখানেই..."

 কথা শেষ করতে পারলেন না। লাফিয়ে উঠলেন শিরশিরে এক আতঙ্কে। খোলা কাঁধের উপর কি যেন একটা অতি দ্রুততার সঙ্গে কিলবিল করে উঠল। বিছে নয় তো? চলকানো চায়ের কাপটা ইজিচেয়ারের সামনে রাখা টুলটায় ‘দ-ড়া-ম করে নামিয়ে রেখে মুহূর্তে ডান হাত দিয়ে কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলেন বিছেটাকে! মাটিতে এসে পড়ল এক টুকরো সুতো। সঙ্গিনীর হাত থেকে বা ব্যাগ থেকে সুতোটা কাঁধে এসে পড়েছিল। স্পর্শানুভূতির ভ্রান্তিতে আপনি সুতোটাকেই ভাবছিলেন বুঝি বিছে। অন্য কিছু না ভেবে বিছেই ভাবলেন কেন? রাতে বাথরুমে গেলে ফাটল ধরা সঁতস্যাতে বাথরুমে প্রায়ই আতঙ্ক সৃষ্টিকারী বিছেদের মুখোমুখি হতে হয়। এ বাড়িতে বিছের দেখা মেলে বলেই কিলবিল না করতে পারা সুতোও কিলবিল করে উঠেছে। এ'হলো স্পর্শানুভূতির ভ্রম (talctile illusion)|

 আমাদের পাঁচটা ইন্দ্রিয়কে ভিত্তি করে ভ্রান্ত অনুভূতিতে পাঁচটা ভাগে ভাগ করা হয়। দর্শনানুভূতি ও স্পর্শানুভূতির কথা তো আগেই বললাম। এ ছাড়া আরও তিনটে অনুভূতি হলো শ্রবণানুভূতির ভ্রম (auditory illusion) ঘ্রাণানুভূতির ভ্রম (olfactory illusion) এবং স্বাদগ্রহণের ভ্রম বা জিহ্বানুভূতির ভ্রম (tasle illusion)।

 একইভাবে অলীক দর্শনও পাঁচটি ইন্দ্রিয়কে ভিত্তি করে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত। অলীক দর্শনের একটা দৃষ্টান্ত এখানে আনছি।

 কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডাঃ সত্যেন সেনের ভাইপো সুজিত সেন মারা যান ৩০ সেপ্টেম্বর '৮৫, কেদার-এ। তার আগের বছর সুজিত সেনের একমাত্র সন্তান আত্মহত্যা করেছিলেন। সুজিতবাবু ও তাঁর জীবনসঙ্গিনী মানসিক আঘাত ভুলতেই সেবার কেদারের পথে বেরিয়ে

৬৬