পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই শ্রেণীর মানুষদের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের সহনশীলতা যাদের কম, তারা এক নাগাড়ে একই কথা শুনলে, ভাবলে বললে মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু কোষ বার বার উত্তেজিত হতে থাকে, আলোড়িত হতে থাকে। এর ফলে অনেক সময় উত্তেজিত কোষগুলো অকেজো হয়ে পড়ে, অন্য কোষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। ফলে মস্তিষ্কের কাজ-কর্মে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নাম-গান শুনতে শুনতে বা গাইতে গাইতে আবেগে চেতনা হারিয়ে অদ্ভুত আচরণ করাও হিস্টিরিয়ার অভিব্যক্তি। সভ্যতার আলো, যুক্তি ও জ্ঞানের আলো ব্যক্তি হিস্টিরিয়ার প্রকোপ কমায়। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে সভ্য, শিক্ষিত মানুষরাও দলবদ্ধভাবে হিস্টিরিয়া রোগের শিকার হয়।


 '৮৭-র জানুয়ারিতে কলকাতা টেলিফোনে অপারেটরদের মধ্যে তড়িতাহতের ঘটনা এমনই ব্যাপকতা পায় যে, অটোম্যানুয়াল এক্সচেঞ্জ, আস্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জের টেলিফোন অপারেটররা আন্দোলনে নেমে পড়েন। কানের টেলিফোন রিসিভার থেকে তাঁরা এমনই গভীরভাবে তড়িতাহত হতে থাকেন যে, অনেককে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করতে হয়। পরে রোগীদের মেডিক্যাল রিপোর্টে তড়িতাহতের কোনও সমর্থন মেলেনি। বরং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর জানা যায় তড়িতাহতের ঘটনাগুলো ছিল সম্পূর্ণ ভয়জনিত কারণে গণ-হিস্টিরিয়া বা গণ-মানসিক রোগ।


 ভরগ্রস্ত রোগীদের সিংহভাগই হিস্টিরিয়া রোগীর শিকার হলেও 'স্কিটসোফ্রিনিয়া' বা 'ম্যানিয়াক ডিপ্রেসিভ' (Maniac Depresive) বা মানসিক অবসাদের থেকেও ‘ভর' হয়। স্কিটসোফ্রিনিয়া নিয়ে আগেই কিছুটা আলোচনা করেছি। তাই নতুন করে আবার আলোচনায় না গিয়ে বরং আমরা এখন ‘ম্যানিয়াক ডিপ্রেসিভ বা মানসিক অবসাদ জনিত কারণে ভর হওয়া নিয়ে আলোচনা করব।

 মানসিক অবসাদের রোগীরাও বেশিরভাগই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, শিক্ষা ও যুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ না পাওয়া মানুষ। পারিবারিক জীবনে এরা অসুখী এবং দায়িত্বভারে জর্জরিত, এবং তার দরুন মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত।

 প্রায় তেত্রিশ বছর আগের ঘটনা। খড়গপুরের চিন্তামণি বাড়ি বাড়ি বাসন মাজার কাজ করত। যখনকার কথা বলছি, তখন চিন্তামণি তিন ছেলে-মেয়ের মা। ওর জীবনসঙ্গী রেল ওয়াগন ভেঙে মাঝে-মধ্যে যা রোজগার করে তার প্রায় পুরোটাই নেশা করেই ফুকে দেয়। মাঝে-মধ্যেই জেলের হাওয়া খেয়ে আসে শ্রীমান। চিন্তামণির শশুর-শাশুড়ি তাদের পুত্রের উচ্ছৃঙ্খল আচরাণের জন্য চিন্তামণিকেই দোষ দেয়। শ্রীমান মাঝে-মধ্যে নেশার টাকার জন্য চিন্তামণিকে মারধোর করে। এক সময় শ্রীমান মাস কয়েকের জন্য জেল ঘুরে এসে চিন্তামণির

৮০