পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বালাধারণকারী পৃথিবীর সংস্পর্শে এলেই বালার তামা ‘আর্থ' হয়ে যাবে। অথচ অনেকেই বলে থাকেন, 'অর্থ' না হতে দেওয়া তামার বালা পরলে অব্যর্থভাবে বাত সারে।

 আরও একটি বৈজ্ঞানিক সত্য এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা প্রয়োজন, বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর তামার মধ্যে বৈদ্যুতিক শক্তি থাকে না।

 মানবদেহে অল্প পরিমাণে বিভিন্ন মৌলিক দ্রব্যের অস্তিত্ব আছে এবং নানা ধরনের অসুখের চিকিৎসাতে মৌলিক দ্রব্যের ব্যবহার সুবিদিত। গর্ভবতীদের রক্তস্বল্পতার জন্য LIVOGEN CAPSULE বা ঐ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে সংশোধিত অবস্থায় রয়েছে লৌহ। প্রস্রাব সংক্রান্ত অসুখের জনা কিছু কিছু ক্ষেত্রে MERCUREAL DIURETIC (DIAMOX) দেওয়া হয়, যার মধ্যে সংশোধিত অবস্থায় পারদ রয়েছে। এক ধরনের বাতের চিকিৎসায় অনেক সময় MYOCRISIN দেওয়া হয়, যার মধ্যে সংশোধিত অবস্থায় সোনা রয়েছে।

 যখন রোগিণীকে LIVOGEN CAPSULE বা ঐ জাতীয় ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন তখন পরিবর্তে রোগিণীকে এক কুইণ্টাল লোহার ওপর শুইয়ে রাখলেও প্রার্থিত ফল পাওয়া যাবে না। কারণ, মৌল দ্রব্য বা ধাতু শরীরে ধারণ করলে তা কখনই শোষিত হয়ে দেহে প্রবেশ করে না।

 উপরের দুটি স্তৰকে যা লিখেছি তা আমার ব্যক্তি-বিশ্বাসের কথা নয়, বিজ্ঞানের সত্য।

 এরপর যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দেবে, তা হলো প্রফুল্লচন্দ্র কি তবে মিথ্যে কথা বলেছিলেন? যদিও আমরা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বুঝতে শিখেছি, সমাজশীর্ষ মানুষরাও মিথ্যাশ্রয়ী হন, তবু তামার বালা পরে প্রফুল্লচন্দ্রের স্পণ্ডিলাইটিস আরোগ্যের মধ্যে কোনও অবাস্তবতা দেখতে পাচ্ছি না।

 আমার এই কথার মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই পরস্পর বিরোধিতা খুঁজে পাচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা এতক্ষণে প্লাসিবো চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়টি বুঝে নিয়েছেন, তাঁদের কাছে নিশ্চয়ই পরিষ্কার হয়েছে প্রফুল্লচন্দ্রের রোগমুক্তির ক্ষেত্রে তামা বা বিদ্যুৎশক্তির কোনও বৈশিষ্ট্য বা গুণই কাজ করেনি, কাজ করেছিল তামা, বিদ্যুৎশক্তি এবং সম্ভবত ডঃ প্রতুল মুখার্জির প্রতি প্রফুল্লচন্দ্রের একান্ত বিশ্বাস।

 অ্যাকুপ্রেসার স্যাণ্ডেলের কথা ব্যাপক বিজ্ঞাপনের দৌলতে অনেকেরই জানা। সর্বরোগহর এক অসাধারণ স্যাণ্ডেল। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় মাত্র দুবার হাঁটলেই নাকি নার্ভে সঞ্জীবনীশক্তির সঞ্চার হয়, দূর হয় হরেক রকমের অসুখ, হজমশক্তির দারুণ রকমের উন্নতি হয়। রোগমুক্তির এমন সহজ-সরল উপায়ে অনেকেই আকর্ষিত হচ্ছেন, কিনেও ফেলেছেন। বাবহারের পর অনেকের নাকি অনেক অসুখ-বিসুখ সেরেও যাচ্ছে। অথচ বাস্তব সত্য হলো এই যে, যাঁরা আরোগ্য লাভ করেছেন, তাঁদের আরোগ্যের পিছনে স্যাণ্ডেলের কোনও গুণ

৮৯