পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক te ভিতর হইতে সেই বড় জামবাটটা আনিয়া তাহাতে ফেন-ভাতের মত জিনিসটা চালিল। উপর উপর একটু নুন ছড়াইয়া বাটটা মাঝখানে রাখিয়া ছেলেমেয়েরা সবাই মিলিয়া চারিদিকে গোল হইয়া বসিয়া খাইতে আরম্ভ করিল। আমি বলিলাম-তোমরা এখান থেকে বুঝি দেশে ফিরবে ? নকছেদী বলিল-দেশে এখন ফিরতে অনেক দেরি। এখান থেকে ধরমপুর অঞ্চলে ধান কাটতে যাব-ধান ত এদেশে হয় না-ওখানে হয়। ধান কাটার কাজ শেষ হ’লে আবার যাব গম কাটতে মুঙ্গের জেলায়। গমের কাজ শেষ হ’তে জ্যৈষ্ঠ মাস এসে পড়বে। তখন আবার খেড়ী কাটা শুরু হবে আপনাদেরই এখানে । তার পর কিছুদিন ছুটি । শ্রাবণ-ভান্দ্রে আবার মকাই ফসলের সময় আসবে। মকাই শেষ হ’লেই কলাই এবং ধরমপুর-পূর্ণিয়া অঞ্চলে কার্ত্তিকশাল ধান। আমরা সারা বছর এই রকম দেশে দেশেই ঘুরে বেড়াই। যেখানে যে সময়ে যে ফসল, সেখানে যাই । নইলে খাব কি ? --বাড়ী-ঘর বলে তোমাদের কিছু নেই ? এবার মেয়েটি কথা বলিল। মেয়েটির বয়স চব্বিশ-পাঁচিশ, খুব স্বাস্থ্যাবতী, বাণিশ-করা কালো রং, নিটোল গড়ন । কথাবার্ত্তা বেশ বলিতে পারে, আর গলার সুবুটা দক্ষিণ-বিহারের দেহাতি হিন্দীতে বড় চমৎকার শোনায়। বলিল-কেনি থাকবে না। বাবুজী ? সবই আছে। কিন্তু সেখানে থাকলে আমাদের তো চলে না । সেখানে যাব গরমকালের শেষে, শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি পর্য্যন্ত থাকিব । তারপর আবার বেরুতে হবে বিদেশে । বিদেশেই যখন আমাদের চাকরী। তা ছাড়া বিদেশে। কত কি মজা দেখা যায়-এই দেখবেন ফসল কাটা হয়ে গেলে আপনাদের এখানেই কত দেশ থেকে কত লোক আসবে } কত বাজিয়ে, গাইয়ে, নাচেনেওয়ালী, কত বহুরূপী সং-আপনি বোধ হয় দেখেন নি। এসব ? কি ক’রে দেখবেন, আপনাদের এ অঞ্চলে তো ঘোর জঙ্গল হয়ে প’ড়ে ছিল-সবে এইবার চাষ হয়েছে। এই দেখুন না। আগে আর পনের দিনের মধ্যেই। এই তো সবারই রোজগারের সময় আসছে।