পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক &8S ع আরও তিন বৎসর কাটিয়া গেল । নাঢ়া বাইহার ও লবটুলিয়ার সমুদয় জঙ্গল-মহাল বন্দোবন্ত হইয়া গিয়াছে। এখন আর কোথাও পূর্বের মত বন নাই। প্রকৃতি কত বৎসর ধরিয়া নির্জনে নিভৃতে যে কুঞ্জ রচনা করিয়া রাখিয়াছিল, কত কেঁয়োবাকার নিভৃত লতাবিতান, কত স্বপ্নভূমি-জনমজুরেরা নির্ম্মম হাতে সব কাটিয়া উড়াইয়া দিল, যাহা গড়িয়া উঠিয়াছিল পঞ্চাশ বৎসরে, তাহা গেল এক দিনে। এখন কোথাও আর সে রহস্যময় দূরবিন্সপী প্রান্তর নাই, জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রিতে যেখানে মায়াপবীরা নামিত, মহিষের দেবতা। দয়ালু টাড়বারো হাত তুলিয়া দাড়াইয়া বন্য মহিষাদলকে ধ্বংস হইতে রক্ষা করিত। নাঢ়া বাইহার নাম ঘুচিয়া গিয়াছে, লবটুলিয়া এখন একটি বস্তি মাত্র। ষে দিকে চোখ যায়, শুধু চালে চালে লাগানো অপকৃষ্ট খোলার ঘর। কোথাও বা কাশের ঘর। ঘন ঘিঞ্জি বসতি-টোলায় টোলায় ভাগ-ফাকা জায়গায় শুধুই ফসলের ক্ষেত্র। এতটুকু ক্ষেতের চারিদিকে ফণিমনসার বেড়া। ধরণীর মুক্তরূপ ইহারা কাটিয়া টুকরা টুকরা করিয়া নষ্ট করিয়া দিয়াছে। আছে কেবল একটি স্থান, সরস্বতী কুণ্ডীর তীরবর্তী বনভূমি। চাকুরীর খাতিরে মনিবের স্বার্থরক্ষার জন্য সব জমিতেই প্রজাবিলি করিয়াছি বটে, কিন্তু যুগলপ্রসাদের হাতে সাজানো সরস্বতী-তীরের অপূর্ব বনকুঞ্জ কিছুতেই প্রাণ ধরিয়া বন্দোবস্ত করিতে পারি নাই। কত বার দলে দলে প্রজারা আসিয়াছে সরস্বতী কুণ্ডীর পাড়ের জমি লইতে-বৰ্দ্ধিত হারে সেলামী ও খাজনা দিতেও চাহিয়াছে, কারণ একে ঐ জমি খুব উর্বরা, তাহার উপর নিকটে জল থাকায় মকাই প্রভৃতি ফসল ভাল জন্মাইবে; কিন্তু আমি রাজী হই नरे । তবে কতদিন আর রাখিতে পারিব ? সদর আপিস হইতে মাঝে মাঝে চিঠি