পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ܓܠܛ কোথাও-এমন কি কড়ারী জমিতে কিংবা গবর্ণমেণ্ট খাসমহলেও ধান হয় না । ভাত জিনিসটা সুতরাং এখানকার লোকে কালেভদ্রে খাইতে পায়-ভাত খাওয়াটা সখের বা বিলাসিতার ব্যাপার বলিয়া গণ্য। দু-চারজন খাদ্যবিলাসী লোক গম বা কলাই বিক্রয় করিয়া ধান কিনিয়া আনে বটে, কিন্তু তাহদের ংখ্যা আঙুলে গোনা যায়। তারপর ধরা যাক ইহাদের বাসগৃহের কথা । এই যে আমাদের মহালের দশ হাজার বিঘা জমিতে অগণ্য গ্রাম বসিয়াছে-সব গৃহস্থের বাড়ীই জঙ্গলের কাশ ছাওয়া, কাশ-ডাটার বেড়া, কেহ কেহ তাহার উপর মাটি লেপিয়াছে, কেহ কেহ তাহা করে নাই। এদেশে বাঁশগাছ আদৌ নাই, সুতরাং বনের গাছের বিশেষ করিয়া কেঁদ ও পিয়াল ডালের বাতা, খুটী ও আড়া দিয়াছে ঘরে । ধর্ম্মের কথা বলিয়া কোন লাভ নাই। ইহারা যদিও হিন্দু, কিন্তু তেত্রিশ কোটি দেবতার মধ্যে ইহারা হনুমান জীকে কি করিয়া বাছিয়া বাহির করিয়া লইয়াছে জানি না-প্রত্যেক বস্তিতে একটা উঁচু হনুমানজীর ধ্বজ থাকিবেই-এই ধ্বজার রীতিমত পূজা হয়, ধ্বজার গায়ে সিঁদুর লেপা হয়। রাম-সীতার কথা কাচিৎ শোনা যায়, তাহদের সেবকের গৌরব তাঁহাদের দেবত্বকে একটু বেশী আড়ালে ফেলিয়াছে। বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, কালী প্রভৃতি দেব দেবীর পূজার প্রচার তত নাই-আদৌ আছে কিনা সন্দেহ, অন্তত আমাদের মহালে তো আমি দেখি at ভুলিয়া গিয়াছি, একজন শিবভক্ত দেখিয়াছি বটে। তার নাম দ্রোণ মাহাতে, জাতিতে গাঙ্গোতা । কাছারিতে কোথা হইতে কে একটা শিলাখণ্ড আনিয়া আজি নাকি দশ-বারো বছর কাছারির হনুমানজীর ধ্ববাজার নীচে রাখিয়া দিয়াছেসিপাহীরা মাঝে মাঝে পাথরখানাতে সিদুর মাথায়, এক ঘটী জলও কেউ কেউ দেয়। কিন্তু পাথরখানা বেশীর ভাগ অনাদৃত অবস্থাতেই পড়িয়া থাকে। কাছারির কিছুদূরে একটা নূতন বস্তি আজ মাস-দুই গড়িয়া উঠিয়াছো-দ্রোণ মাহাতো সেখানে আসিয়া ঘর বঁাধিয়াছে ৷ দ্রোণের বয়স সত্তরের বেশী ছাড়া কম