পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ৯২ ]

করিতেন। রামলাল সর্ব্বদা নিকটে থাকিত, তাহার সহিত বরদা বাবুর মনের কথা হইত। রামলাল এই প্রকারে অনেক উপদেশ পায় —সুযোগ পাইলেই কি২ উপায়ে পরমার্থ জ্ঞান ও চিত্তশোধন হইতে পারে তদ্বিষয়ে গুরুকে খুঁচিয়া২ জিজ্ঞাসা করিত। একদিন রামলাল বলিল —মহাশয়! আমার দেশ ভ্রমণ করিতে বড় ইচ্ছা যায়—বাটীতে থাকিয়া দাদার কুকথা ও ঠকচাচার কুমন্ত্রণা শুনিয়া২ ত্যক্ত হইয়াছি কিন্তু মা বাপের ও ভগিনীর স্নেহ প্রযুক্ত বাড়ি ছেড়ে যাইতে পা বাধুবাধু করে— কি করিব কিছুই স্থির করিতে পারি না।

 বরদা। দেশ ভ্রমণে অনেক উপকার। দেশ ভ্রমণ না করিলে লোকের বহুদর্শিত্ব জন্মে না, নানা প্রকার দেশ নানা প্রকার লোক দেখিতে দেখিতে মন দরাজ হয়। ভিন্ন ভিন্ন স্থানের লোকদিগের কি প্রকার রীতি নীতি, কিরূপ ব্যবহার ও কি কারণে তাহাদিগের ভাল অথবা মন্দ অবস্থা হইয়াছে তাহা খুঁটিয়া অনুসন্ধান করিলে অনেক উপদেশ পাওয়া যায়; আর নানা জাতীয় ব্যক্তির সহিত সহবাস হওয়াতে মনের দ্বেষভাব দূরে যাইয়া সদ্ভাব বাড়িতে থাকে। ঘরে বসিয়া পড়া শুনা করিলে কেতাবী বুদ্ধি হয় —পড়া শুনাও চাই —সৎলোকের সহবাসও চাই —বিষয়কর্ম্মও চাই —নানা প্রকার লোকের সহিত আলাপও চাই। এই কয়েকটি কর্ম্মের দ্বারা বুদ্ধি পরিষ্কার এবং সদ্ভাব বৃদ্ধিশীল হয় কিন্তু ভ্রমণ করিতে গিয়া কি২ বিষয়ে ভাল করিয়া অনুসন্ধান করিতে হইবে তাহা অগ্রে জানা আবশ্যক, তাহা না জানিয়া ভ্রমণ করা বলদের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়ান মাত্র। আমি এমন কথা বলি না যে এরূপ ভ্রমণ করাতে কিছুমাত্র উপকার নাই —আমার সে অভিপ্রায় নহে, ভ্রমণ করিলে কিছু না কিছু উপকার অবশ্যই আছে কিন্তু যে ব্যক্তি ভ্রমণকালে কি২