পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৫৩ ]

করিল। তাহার মানস এই যে তালুক থেকে কসে টাকা আদায় করিয়া দেনা টেনা পরিশোধ করিয়া সাবেক ঠাট বজায় রাখিবেক। বাবু জমিদারি কাগজ কখন দৃষ্টি করেন নাই, কাহাকে বলে চিঠা, কাহাকে বলে গোসোয়ারা, কাহাকে বলে জমাওয়াসিল বাকি কিছুই বোধ নাই। নায়েব বলে —হুজুর! একবার লতাগুলান দেখুন —বাবু কাগজের লতার উপর দৃষ্টি না করিয়া কাছারি বাটীর তরুলতার দিকে ফেল্‌২ করিয়া দেখেন! নায়েব বলে, মহাশয়! এক্ষণে গাঁতি অর্থাৎ খোদকস্তা প্রজা এত ও পাইকস্তা এত। বাবু বলেন― আমি খোদকস্তা, পাইকস্তা শুন্‌তে চাই না —আমি সব এককস্তা করিব। বড় বাবু ডিহির কাছারিতে আসিয়াছেন এই সংবাদ শুনিয়া যাবতীয় প্রজা একেবারে ধেয়ে আইল ও মনে করিল বদ্‌জাত নেড়ে বেটা গিয়াছে, বুঝি এত দিনের পর আমাদিগের কপাল ফিরিল। এই কারণে আহ্লাদিত চিত্তে ও সহাস্যবদনে রুক্ষচূলো, শুখনোপেটা ও তলাখাঁক্তি প্রজারা নিকটে আসিয়া সেলামি দিয়া “রবধান” ও “স্যালাম” করিতে লাগিল। মতিলাল ঝনাঝন্‌ শব্দে স্তুব্ধ হইয়া লিক্‌২ করিয়া হাসিতেছেন। বাবুকে খুশি দেখিয়া প্রজারা দাদ্‌খাই করিতে আরম্ভ করিল। কেহ বলে, অমুক আমার জমির আল ভাঙ্গিয়া লাঙ্গল চষিয়াছে —কেহ বলে, অমুক আমার খেজুরগাছে ভাঁড় বাঁধিয়া রস চুরি করিয়াছে —কেহ বলে অমুক আমার বাগানে গরু ছাড়িয়া দিয়া তচ্‌নচ্‌ করিয়াছে —কেহ বলে অমুকের হাঁস আমার ধান খাইয়াছে —কেহ বলে আমি আজ তিন বৎসর কবজ পাই না —কেহ বলে, আমি খতের টাকা আদায় করিয়াছি, আমার খত ফেরত দেও —কেহ বলে আমি বাবলা গাছটি কেটে বিক্রি করিয়া ঘরখানি সারাইব —আমাকে চৌট মাফ করিতে হুকুম হউক —কেহ বলে আমার জমির খারিজ দাখিল হয় নাই আমি তার