পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৮০ ]

“হ্যাঁ” বলিয়া কাগজপত্র তাঁহার হস্তে সমর্পণ করিলেন। হনূমান যেমন রাবণের মৃত্যুবাণ পাইয়া আহ্লাদে লঙ্কা হইতে মহাবেগে আসিয়াছিল, বাঞ্ছারামও ঐ সকল কাগজপত্র ইষ্ট কবচের ন্যায় বগলে করিয়া সেইরূপ ত্বরায় সহর্ষে বাটী আসিলেন।

 প্রায় সম্বৎসর হয় —বৈদ্যবাটীর সদর দরওয়াজা বন্ধ —ছাত দেয়াল ও প্রাচীর শেওলায় মলিন হইল —চারিদিকে অসঙ্খ্য বন —কাঁটানটে ও শেয়ালকাঁটায় ভরিয়া গেল। বাটীর ভিতরে মতিলালের বিমাতা ও স্ত্রী এই দুইটি অবলামাত্র বাস করেন, তাঁহারা আবশ্যকমতে খিড়কি দিয়া বাহির হয়েন। অতি কষ্টে তাঁহাদের দিনপাত হয় —অঙ্গে মলিন বস্ত্র—মাসের মধ্যে পোনের দিন অনাহারে যায় —বেণী বাবুর দ্বারা যে টাকা পাইয়াছিলেন তাহা দেনা পরিশোধ ও কয়েক মাসের খরচেই ফুরাইয়া গিয়াছে সুতরাং এক্ষণে যৎপরোনাস্তি ক্লেশ পাইতেছেন ও নিরুপায় হইয়া ভাবিতেছেন।

 মতিলালের স্ত্রী বলিতেছেন —ঠাক্‌রুন! আমরা আর জন্মে কতই পাপ করেছিলাম তাহা বলিতে পারি না —বিবাহ হইয়াছে বটে কিন্তু স্বামীর মুখ কখন দেখিলাম না—স্বামী এক বারও ফিরে দেখেন না —বেঁচে আছি কি মরেছি তাহাও একবার জিজ্ঞাসা করেন না। স্বামী মন্দ হইলেও তাঁহার নিন্দা করা স্ত্রীলোকের কর্ত্তব্য নহে —আমি স্বামীর নিন্দা করি না —আমার কপাল পোড়া, তাঁহার দোষ কি? কেবল এই মাত্র বলি এক্ষণে যে ক্লেশ পাইতেছি স্বামী নিকটে থাকিলে এ ক্লেশ ক্লেশ বোধ হইত না। মতিলালের বিমাতা বলিলেন —মা! আমাদের মত দুঃখিনী আর নাই —দুঃখের কথা বল্‌তে গেলে বুক ফেটে যায় —দীন-হীনদের দীননাথ বিনা আর গতি নাই।