পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৮২ ]

সার্‌জন সহিত বাড়ির ভিতর হুড়্‌মুড়্ করিয়া প্রবেশ করত অন্তঃপুরে গমন করেন —এমন সময়ে মতিলালের বিমাতা ও স্ত্রী দুইজনে ঐ প্রাচীনা দাসীর দুই হাত ধরিয়া হে পরমেশ্বর! অবলা দুঃখিনী নারীদের রক্ষা কর, এই বলিতে২ চক্ষের জল পুঁচিতে২ খিড়্‌কি দিয়া বাহির হইয়া আসিলেন। মতিলালের স্ত্রী বলিলেন —মাগো! আমরা কুলের কামিনী —কিছুই জানি না —কোথায় যাইব? পিতা সবংশে গিয়াছেন —ভাই নাই —বোন নাই —কুটুম্ব নাই —আমাদের কে রক্ষা করিবে? হে পরমেশ্বর! এখন আমাদের ধর্ম্ম ও জীবন তোমার হাতে —অনাহারে মরি সেও ভালো, যেন ধর্ম্ম নষ্ট হয় না। অনন্তর পাঁচ-সাত পা গিয়া একটি বৃক্ষের তলায় দাঁড়াইয়া ভাবিতেছেন, ইতিমধ্যে একখানা ডুলি সঙ্গে বরদাপ্রসাদ বাবু ঘাড় নত করিয়া ম্লানবদনে সম্মুখে আসিয়া বলিলেন —ওগো! তোমরা কাতর হইও না, আমাকে সন্তানস্বরূপ দেখ —তোমাদের নিকট আমার ভিক্ষা যে ত্বরায় এই ডুলিতে উঠিয়া আমার বাটীতে চল —তোমাদিগের নিমিত্তে আমি স্বতন্ত্র ঘর প্রস্তত করিয়াছি —সেখানে কিছুদিন অবস্থিতি কর, পরে উপায় করা যাইবে। বরদা বাবুর এই কথা শুনিয়া মতিলালের স্ত্রী ও বিমাতা যেন সমুদ্রে পড়িয়া কূল পাইলেন। কৃতজ্ঞতায় মগ্ন হইয়া বলিলেন, —বাবা! আমাদিগের ইচ্ছা হয় তোমার পদতলে পড়িয়া থাকি —এ সময় এমত কথা কে বলে? বোধ হয় তুমি আর জন্মে আমাদিগের পিতা ছিলে। বরদা বাবু তাঁহাদিগকে ত্বরায় সোয়ারিতে উঠাইয়া আপন গৃহে পাঠাইয়া দিলেন। অন্যের সহিত দেখা হইলে তাহারা পাছে একথা জিজ্ঞসা করে এজন্য গলি ঘুঁজি দিয়া আপনি শীঘ্র বাটী আইলেন।