পাতা:আলোক-লতা - চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলােক-লতা
৮৭

পাইয়া তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিল—তা তো কখনো নয়। তবে সে তার স্ত্রীর কাছে মলিনার কথা বলে নাই কেন? বলার কোনো আবশ্যক বা উপলক্ষ্য হয় নাই বলিয়াই। এতদিন যখন বলা হয় নাই, তখন এখন বলিতে গেলে সুবাসিনীর মনে অকারণ সন্দেহই জাগাইয়া তোলা হইবে; এবং সন্দিগ্ধ স্ত্রীর কাছে সুন্দরী যুবতীকে আশ্রয় দিয়া রাখিলে তাকে অনাবশ্যক ও অকারণ হিংসায় জ্বালাইয়া পীড়া দেওয়া হইবে। তার চেয়ে মলিনা যেমন আছে তেমনি থাকুক; মলিনার বাসায় খুদির মা আছে, রাঘব আছে, আর একজন ঝি রাখিতে ত হইবেই, আর সনৎ নিজে আছে, অতএব মলিনাকে দেখিবার শুনিবার লোকের অভাব কি। অধিকন্তু সনতের বাসার জন্য একজন রাঁধুনি ত চাইই—অন্য নূতন লোককে আবার মাইনে দিয়া না রাখিয়া মলিনাকে রাখিলেই কম খরচে বাড়ীর যত্ন পাওয়া যাইবে।

 মলিনাকে এইখানে রাখাই ঠিক, স্থির করিয়াই সনতের মন যেন একটা বোঝ নামাইয়া হাল্কা প্রফুল্ল হইয়া উঠিল। মলিনাকে যে দূরে সরাইতে হইবে না, সনৎ যেখানে অধিক সময় থাকে সেইখানেই যে মলিনা থাকিবে, এরই একটা আনন্দে সনতের মন স্বচ্ছন্দ অনুভব করিতে লাগিল। পুঁটির মৃত্যুর পর সনৎই যে মলিনার আশ্রয় অবলম্বন অভিভাবক এবং একমাত্র আপনার জন, মলিনা যে তারই, এই অধিকারের আনন্দ তার মনকে রসসিক্ত করিয়া তুলিল; মলিনাকে যে সুবাসিনীর অজ্ঞাতে গোপনে সনৎ আপনার কাছে রাখিয়াছে এরই একটা অস্পষ্ট লজ্জা ও ভয় মলিনার প্রতি তার আকর্ষণকে আরো মোহময় মদির করিতে লাগিল। যে গোপনতার অন্তরালে মলিনা ও সনতের মিলন ঘটিয়াছিল তার অল্প দৃশ্য ও অল্প অদৃশ্য অস্পষ্টতাই সেই মিলনে মাদকতা ও সৌন্দর্য্য সঞ্চার করিয়া দিতেছিল।