খাকি একবার আড়াল থেকে তার চেহারাখানি দেখে নেবার জন্যে থাকে-থাকে কুঠিবাড়ির দিকে ঘুরে আসে; ‘পিউ’ বলে যেমন ডাকা, অমনি সে সোনার মন্দিরের মতো সেই ঘড়িটার কাছে ছুটে যায়, খুট করে দরজা বন্ধ হবার মতো একটা শব্দ শোনে, তখন চক্ষুশূল হুটো ঘড়ির কাঁটাই সে দেখতে পায়। পাখি, যে ‘পিয়া পিউ’ বলে ডাকলে, তার আর দেখা পায় না, এমনি নিত্য ঘটে বারে বারে। ঘড়ির মধ্যে যে পাখি, সে এখনো ডাকে নি, ডেকে গেল বনের পাখিট। শুনে খাকি বললে, “আঃ, তবু ভালো,এই বেলা গিয়ে ঘুলঘুলিতে আড়াসি পেতে বসে থাকি, আজ সে পিউ-পাখির দেখা নিয়ে তবে অন্য কাজ, রোজই কি ফাঁকি দেবে।”
খাকি কেন যে ঘন ঘন ঘড়ি দেখে আসে, সফেদির কাছে আজ সেটা ধরা পড়ে গেল। খাকির মন-পাখি যে কোন্ পাখির কাছে বাঁধা পড়েছে, সবার কাছে সেই খবরটা জানিয়ে দেবার জন্যে সফেদি চলেছে, এমন সময় চালের উপর থেকে কে একজন ডাক দিলে, “সাদি, ও দিদি, ও সফেদি।” “কে রে, কে রে”— ব’লে সাদি চারি দিক চাইতে লাগল। উত্তর হল, “আমি কবুত গো কবুত।” সফেদি রেগে বললে, “আরে তা তো জানি। কোথায় তুই?”
“ছাতে গো ছাতে।”
সাদি দেখলে, এক গাঁ থেকে আর-এক গাঁয়ে নীল আকাশের খবর বয়ে চলে যে নীল পায়রা তারি একটা একটুখানি জিরোতে আর একটু গল্প করে নিতে কোঠাবাড়ির আলসেতে বসেছে।
গোলাবাড়ির কুঁকড়োকে একটিবার চোখে দেখতে, তার একটুখানি খবর শুনে জীবনটা সার্থক করে নিতে পায়রা অনেক দিন ধরে মনে আশা করে আসছে; সাদা মুরগির কাছে ঠিক খবর পাবে মনে করে পায়রা তাকে শুধোতে যাবে, এমন সময় উঠোনের কোণে একটা মাসকলাই চোখে পড়তেই সাদি সেদিকে ‘রও’ বলেই দৌড়ে গেল। সাদিকে কলাইখুঁটতে দেখে সুরকি ছুটে এল, কালি বালি গুলজারি সবাই এসে সাদিকে ঘিরে শুধোতে লাগল, “দেখি, কী পেলি। দেখি, কী খেলি। দেখি দেখি, কী কী।” সাদি টুপ করে মাসকলাইটা গালে ভরে ফিক করে হেসে বললে, “কট্ কট্ কলাট, মা-স ক-লা-ই।” ব’লেই সাদি কোঠাবাড়ির ঘুলঘুলির ধারে যেখানে খাকি চুপটি করে বসে ছিল, সেখানে চলে গেল।
সাদি বললে, “ওলো, ঘুলঘুলিটা খোলা পেলি কি।”