পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
আলোর ফুলকি

মুখটি দিয়ে চুপটি করে থাকে।” ভালোবাসার বশে জিন্মা বাড়ির বাগানটায় এত গর্ত করে রাখত যে এক-একদিন বুড়ো ভাগবত মালি কর্তার কাছে কুকুরের নামে নালিশ জুড়ত। কিন্তু জিন্মার সব দোষ মাপ ছিল, গোলাবাড়ির সব জানোয়ারের খবরদারি, ক্ষেতে না গোরুবাছুর ঢোকে তার দিকে নজর রাখা, এমনি সব পাহারার কাজে জিম্মার মতো আর তো দুটি ছিল না। তা ছাড়া জিম্মার জিন্মায় অমন যে কুঁকড়ো এমন-কি, তাঁর অত্যাশ্চর্য সুরটি পর্যন্ত রাত্রে না রাখলে চলে না; কাজেই কুকুর হঠাৎ যখন বললে, ‘রও' তখন যে একটা বিপদের সম্ভাবনা আছে, সেটা জানা গেল। কিন্তু এমন কী বিপদ হতে পারে। কুঁকড়ো দেখলেন, অন্যদিন যেমন আজও সন্ধ্যাবেল ঠিক তেমনি চারি দিক নিরাপদ বোধ হচ্ছে, অন্তত তাঁর এই গোলাবাড়ির রাজত্বের বেড়ার মধ্যে কোনো যে শত্রু আছে, তা তো কিছুতেই মনে হয় না। সে যে মিছে ভয় পাচ্ছে সেটা তিনি জিম্মাকে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করলেন। ভয় কাকে বলে কুকুরের জানা ছিল না; কিন্তু মিথ্যুক আর মিছে নিন্দে রটাতে গোলাবাড়িতে আর পাড়াপড়শীর ঘরেতে যারা, তাদের সে ভালোরকমই জানত। কুঁকড়ো না জানলেও ঐ বোঁচা-ঠোঁট চড়াই আর ডিগডিগে-পা ময়ূর যে কুঁকড়োর দুই প্রধান শত্রু, সেটা জিন্মা কুঁকড়োকে জানিয়ে দিতে বিলম্ব করলে না। তালচড়াই, যার নিজের কোনো আওয়াজ নেই, হরবোলার মতো পরের জিনিস নকল করেই চুলবুল করে বেড়ায়, পরের ধনে পোদ্দারি যার পেশা, আর ঐ ময়ুর, জরি-জরাবৎ আর হীরে-মানিকের ঝকমকানি ছাড়া আর-কোনো আলো যার ভিতরে বাহিরে কোথাও নেই, দরজি আর জহুরির দোকানের নমুনো-ঝোলাবার আলনা ছাড়া আর কিছুই যাকে বলা যায় না, এই অদ্ভুত জানোয়ার তাঁর প্রধান শত্রু শুনে কুঁকড়ো একেবারে 'হাঃ হাঃ' করে হেসে উঠলেন। জিন্মা বললে, “কারে সঙ্গে খোলাখুলি শক্রতা করবার সাহস আর ক্ষমতা না থাকলেও এর সবাইকে হেয় মনে করে, এমন-কি, কুঁকড়োর নিন্দেও সুবিধা বুঝে করতে ছাড়ে না। এবং খাওয়া-পর-সাজগোজের দিক দিয়েও এরা পাড়ার মধ্যে নানা বদ চাল ঢোকাচ্ছে। এদের দেখাদেখি অন্যরাও বেয়াড়া বেচাল বে-আদব হয়ে ওঠবার জোগাড়ে আছে। সাদাসিধেভাবে খেটেখুটে পাড়াপড়শীকে ভালোবেসে আনন্দে থাকতে চায় যে-সব জীব, তাদের এই-সব