সাজানো পাখিরা বলে, “ছা-পোষার“দল। আর নিষ্কর্মা বসে-থাকা পালকের গদিতে কিম্বা মাথায় পালক গুঁজে হাওয়া খেয়ে ঘুরঘুর করাকেই এরা বলে চাল। সেটা রাখতে চালের সব খড় উড়ে গেলেও এর নিজের বুদ্ধির প্রশংসা নিজেরাই করে থাকে, আর অনেক সুবুদ্ধি পাখির মাথা ঘুরিয়ে দেয় দুর্বুদ্ধি এই দুই অদ্ভূত জানোয়ার, কথা-সর্বস্ব হরবোলা আর পাখা-সর্বস্ব চালচিত্র।”
কুঁকড়ো কাজে যেমন দড়ো, বুদ্ধিতে তেমনি; চড়াই আর ময়ূরের চেয়ে অনেক বড়ো, দিলদরিয়া, কাজেই পৃথিবীতে অন্তত এই গোলাবাড়িতে যে তাঁর কেউ গোপনে সর্বনাশের চেষ্টায় আছে, এটা বিশ্বাস করা কুঁকড়োর পক্ষে শক্ত। তিনি বললেন, “জিন্মা নিশ্চয়ই একটু বাড়িয়ে বলছে, অন্যের সামান্য দোষকে সে এত যে বড়ো করে দেখছে, সে কেবল তাঁকে সে খুবই ভালোবাসে বলে। চড়াই হল তাঁর ছেলেবেলার বন্ধু আর ময়ুরটা লোক তো খুব মন্দ নয়। আর যদিই বার্তার শত্রু সবাই হয়, তাতেই বা ক্ষতি কী। তিনি তার গান এবং মুরগিদের ভালোবাসা পেয়েই তো সুখী, নেইবা আর কিছু থাকল।”
জিন্মা অনেকদিন এই গোলাবাড়িটায় রয়েছে, এখানকার কে যে কেমন, তা জানতে তার বাকি ছিল না। কুঁকড়োর উপরে মুরগিদেরও যে খুব টান নেই, তারও প্রমাণ অনেকবার পাওয়া গেছে। “বিশ্বাস কাউকে নেই।” বলেই জিম্মা এমনি এক হুংকার ছাড়ল যে পাঁচিলের গায়ে চড়াই পাখির খাঁচাটা পর্যন্ত কেঁপে উঠল। “ব্যাপার কী!” বলে চড়াই কুঞ্জলতার মাচা বেয়ে নীচে উপস্থিত। জিন্মা চড়াইকে সাফ জবাব দেবার জন্যে চেপে ধরলে। আড়ালে একরকম আর কুঁকড়োর সামনে অন্যরকম ভাব দেখানে আর চলছে না। বলুক সে-চড়াইটা সত্যিই কুঁকড়োকে পছন্দ করে কি না, না হলে আজ আর ছাড়ান নেই। চড়াই মনে মনে বিপদ গুনলে। কিন্তু কথায় তার কাছে পারবার জো নেই। সে অতি ভালোমানুষটির মতো উত্তর করলে, “কুঁকড়োকেও টুকরো-টুকরো ক’রে দেখলে বাস্তবিকই আমার হাসি পায়; আর তার খুঁটিনাটি এটি-ওটি নিয়েই আমি তামাশা করে থাকি। কিন্তু সবখানা জড়িয়ে দেখলে কুঁকড়োকে আমার শ্রদ্ধাই হয় বলতে হবে। শুধু তাই নয়, কুঁকড়োর খুঁটিনাটি নিয়ে আমি যে ঠাট্টা-তামাশাগুলো করে থাকি, সেগুলো সবাই যে অপছন্দ করে