পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
১৯

বলতে সোনার টোপর সোনালিয়া বন-মুরগি কুঞ্জলতার বেড়ার ওপার থেকে ঝপাং করে উড়ে এসে উঠোনের মধ্যে পড়ল।

 কুঁকড়ে বলে উঠলেন, “একী। এ কে! কে এ।”

 সোনালিয়া কুঁকড়োর কাছে ছুটে গিয়ে বললে, “পাহাড়তলির ‘সা মোরগ’, আপনি আমায় রক্ষে করুন।” আবার দুম করে আওয়াজ। সোনালিয়া চমকে উঠেই অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়লেন, পালাবার আর শক্তিই ছিল না। কুঁকড়ো অমনি একখানি ডানা বাড়িয়ে সোনালিয়াকে তুলে ধরে আর-এক ডানার ঝাপটা দিয়ে গামলা থেকে জলের ছিটে আর বাতাস দিতে থাকলেন খুব আস্তে আস্তে। তাঁর ভয় হচ্ছিল পাছে পাতার সবুজ, ফুলের গোলাপি, সোনার জল আর সন্ধ্যাবেলার আলো দিয়ে গড়া বাসন্তী শাড়িপরা এই আশ্চর্য পাখিটি জল পেয়ে গলে যায়, কি বাতাসে মিলিয়ে যায়। একটু চেতন পেয়ে সোনালিয়া আবার কুঁকড়োকে মিনতি করতে লাগল, “ওগো একটু আমায় লুকোবার স্থান দাও, আমাকে পেলে তারা মেরেই ফেলবে।”

 চড়াই সোনালিয়ার গায়ে টকটকে লাল সাটিনের কাঁচুলি দেখে বললে, “এতখানি লালের উপর থেকে শিকারীর বন্দুকের তাগ কেমন করে যে ফসকাল, তাই ভাবছি।”

 সোনালিয়া বললে, “সাধে কি গুলি ফসকেছে, চোখে যে তাদের ধাঁধা লেগে গেল। তারা মনে করেছিল, ঝোপের মধ্যে থেকে ছাই রঙের একটা তিতির-মিতির কেউ বার হবে, কিন্তু আমি সোনালি যখন হঠাৎ বেরিয়ে গেলুম সামনে দিয়ে তখন শিকারী দেখলে খানিক সোনার ঝলকা, আর আমি দেখলেম একটা আগুনের হলকা। গুলি যে কোন্দিকে বেরিয়ে গেল কে তা দেখবে। কিন্তু ডালকুত্তোটা আমায় ঠিক তাড়া করে এল। কুকুরগুলো কী বজ্জাত।” এমন সময় জিম্মাকে দেখে “অন্য কুকুর নয়, ওই ডালকুত্তোগুলোর মতো বজ্জাত দেখি নি, বাপু।” এই বলে সোনালিয়া একটু লুকোবার স্থান দেখিয়ে দিতে কুঁকড়োকে বারবার বলতে লাগল। কুঁকড়ো একটু সমিস্যায় পড়লেন। আগুনের ফুলকি এই সোনালিয়া পাখি, একে কোন্ ছাইগাদায় তিনি লুকোবেন। তিনি দু-একবার এ-কোণ ও-কোণ দেখে, এখানটা-ওখানটা দেখে বললেন, “না, এঁকে আর রামধনুককে লুকোতে পারা কঠিন।”