পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
আলোর ফুলকি

 এক মুরগি বললে, “বাড়ি চলেছি। এই যে আমাদের ঘরে যাবার সিঁড়ি।”

 মই বেয়ে মুরগিদের উঠতে দেখে সোনালিয়া অবাক হয়ে গেল। বনের মধ্যে তো এ-সব কিছুই নেই।

 চিনে-মুরগি সোনালিয়ার সঙ্গে খুব আলাপ জমিয়ে বন্ধুত্ব করবার চেষ্টায় আছেন, সোনালিয়া তাকে বললে যে, এখনি তাকে আবার বনে ফিরে যেতে হবে, গোলাবাড়িতে সে কেবল দুদণ্ডের জন্য এসেছে বৈ তো নয়। ঠিক সেই সময় দূরে হম করে আবার বন্দুকের আওয়াজ হল। এখনো শিকারীগুলো বন ছেড়ে যায় নি, কাজেই সোনালিকে কিছুতেই বনে একলা পাঠাতে কুঁকড়োর একটু ইচ্ছে নেই। গোলাবাড়ির সবাই তাকে আজকের রাতটা কোনোরকমে সেখানে কাটাতে অনুরোধ করতে লাগল। জিম্মা নিজের বাক্সটা রাতের মতো সোনালিকে ছেড়ে দিয়ে বাইরে শুতে রাজি হল। বন্ধ ঘরের মধ্যে সোনালি কোনোদিন শোয় নি; কিন্তু কী করে। প্রাণের দায়ে তাতেই সে রাজি হল। চিনে-মুরগির আহ্লাদ আর ধরে না, সে সোনালিকে তার সকালের মজলিসে যাবার জন্যে আবার ধর-পাকড় করতে লাগল। এমন সময় অন্ধকার হয়ে আসছে দেখে কুঁকড়ো ডাক দিলেন, “চুপ রহ। চুপ রহ।” তার পর মইটা বেয়ে মটকায় উঠে তিনি চারি দিকটা একবার বেশ করে দেখে নিলেন, হাস মোরগ মুরগি কাচ্ছা বাচ্ছা সবাই আপনার আপনার খোপে যে যার মায়ের কোলে ডানার নীচে সেঁধিয়েছে কি না। চিনে-মুরগি সোনালির কানে কানে বললে, “মনে থাকবে তো ভাই, কুলতলায় ভোর পাচটা থেকে ছটার সময়। ময়ুর নিশ্চয় আসবেন, কাছিম বুড়োও আসবেন বোধ হয়, আর সুরকি-দিদি বলেছে কুঁকড়োকেও নিয়ে যাবে।” কুঁকড়ো একবার সুরকির দিকে চেয়ে দেখলেন, সুরকি খোপ থেকে আস্তে আস্তে মুখটি বার করে গিন্নিপনা করে বললে, “তুমিও যাবে তো। চিনি-দিদির ভারি ইচ্ছে। আমারও ইচ্ছে তুমি পাঁচজনের সঙ্গে একটু মেশো, ছেলেমেয়ের তো বিয়ে দিতে হবে।”

 কুঁকড়ো সাফ জবাব দিলেন, “না।” সোনালি মইখানার নীচে থেকে কুঁকড়োর দিকে মুখ তুলে খুব মিষ্টি করে বললে, “যেতেই হবে তোমায়।”

 কুঁকড়ো মুখ নিচু করে বললেন, “কেন বলে তো।” সোনালিয়া বললে, “সুরকি-দিদির