পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
২৯

 চড়াই বললে, “শুনছিলেম বটে একটা ঘোট চলেছে।” যুটফুটে অন্ধকারে সব ঘুটেগুলো এমন কাপতে লাগল যে রাত্রিটা তুলছে বোধ হল।

 কুঁকড়ে বললেন, “বটে, ঘোট চলেছে?” চড়াই বললে, “ই তোমার সর্বনাশের, সাৰধান।” “বয়ে গেল।” বলে কুঁকড়ে আবার গিয়ে ঘরে ঢুকলেন।

 চড়াই আবার ভালোমানুষটির মতো গা-ঝাড় দিয়ে বসল। সে ঠিক-ঠিক কথাই বলেছে কিন্তু কেমন হদিক বাচিয়ে বলেছে। যুধিষ্ঠিরের অশ্বথামাহত-ইতি-গজ গোছের। কথাটা চড়াইয়ের মুখে শুনে কিন্তু পেচাদের সন্দেহ বাড়ল। “চড়াই সত্যিই তাদের দলে কি না” —শুধতে অন্ধকারের মধ্যে একটার পর একটা চোখ চড়াইয়ের দিকে চাইতে লাগল। চড়াই বললে, “আমি বাপু কোনো দলে নেই; তবে ঘোটটা কেমন চলে দেখতে ইচ্ছে আছে।” পেচাতে চড়াই খায় না, কাজেই ঘোটে গেলে কোনো বিপদ তার নেই বলে পেচার চড়াইকে মন্ত্রণাসভায় যাবার স্থানটি বাতলে দিয়ে বললে, “চোরের মন পুইআঁদাড়ে', এই শোলক বললেই সে দরজা খোলা পাবে।”

 এ দিকে ঘরের মধ্যে থেকে সোনালিয়ার ইপি ধরছিল; সে একটু ভালো হাওয়া পেতে ঘর থেকে মুখ বার করেই সব নিশাচরকে দেখে একি? বলে চমকে উঠল। অমনি সব চোখ একসঙ্গে ঝপ করে বন্ধ হয়ে গেল। অনেকক্ষণ আর সাড়া-শব্দ নেই। তখন অন্ধকারে একটির পর একটি চোখ খুলল আর বলাবলি শুরু হল। সোনালিয়া চুপ করে শুনছে কে একজন উঠোনের ও-কোণ থেকে বললে, “বেঁচে থাকো পেচা-পেচিরা।” পেচার শুধলে, “আমরা তো ওর নামটি পর্যন্ত সইতে পারি নে তা জানে, কিন্তু তোমরা তার উপর চটা কেন বলো তো।”

 দিনের বেলায় যারা দুষ্টবুদ্ধি লুকিয়ে বেড়ায়, রাত্রে তাদের পেটের কথাটা আপনিই যেন প্রকাশ হয়ে পড়ে। বেড়াল খুব চাপা জন্তু কিন্তু আগেই তার কথা বেরিয়ে পড়ল, “ওই কুকুরটার সঙ্গে অত তার ভাব ব’লেই কুঁকড়োটাকে চক্ষে আমি দেখতে পারি নে।” পেরু বললেন, “যাকে সেদিন জন্মাতে দেখলেম, সে আজ কর্তা হয়ে উঠল, এটা আমি কিছুতেই সইব না।