৪
খেত আর আবাদ যেখানে শেষ হয়েছে, সেইখানে পাহাড়ের একটা ঢল, সেইখানে পেচাদের ঘোটের মজলিস বসবে। অতি নোংরা ঢালু জমি; শেয়ালকাটা, বাবলার্কাটায় ভরা; উপরে মস্ত পাকুড় গাছটা, সরু একটা পাগদণ্ডি বেয়ে সেখানে উঠতে হয়। রাত্রে জায়গাটাতে এলে ভয় করে কিন্তু দিনের বেলায় যখন সূর্য ওঠে, এখান থেকে ছায়ায় বসে পাহাড়েঘেরা গ্রাম, নদী সবই অতি চমৎকার দেখায়।
পাকুড় গাছে, লতা-পাতায় ঝোপে-ঝাড়ে জায়গাটা এমনি ঢাকা যে একবিন্দুও চাদের আলো সেখানে পড়তে পায় না। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে হুতুম পেঁচার চোখ টপটপ করে জ্বলছে, আর কিছু দেখাও যাচ্ছে না, শোনাও যাচ্ছে না, অথচ অনেক পাখিই আজ সেখানে জুটেছে ঘোঁট করতে। পেঁচার সর্দার হুতুম একে একে নাম ধরে ডাকতে লাগলেন, আর চারি দিকে একটার পর একটা লাল, নীল, হলদে, সবুজ চোখ জ্বালিয়ে দেখা দিতে থাকল একে একে ধুঁধুল পেঁচা, কাল্ পেঁচা, কুটুরে পেঁচা, গুড়গুড়ে পেঁচা, দেউলে পেঁচা, দালানে পেঁচা, গেছো পেঁচা, জংলা পেঁচা, পাহাড়ী পেঁচা। হুথুমথুমে ডেকে চলেছে, “ভূতো পেঁচা, খুদে পেঁচা, চিলে পেঁচা, গো-পেঁচা, গোয়ালে পেঁচা, লক্ষ্মী পেঁচা,” লক্ষ্মী পেঁচার দেখা নেই, চোখও জ্বলছে না। হুতুম ঘাড় ফুলিয়ে রেগে ডাক দিলে,” ল-ক্-বী-পে-এT-এ্যা-চ-আ আ।” লক্ষ্মী পেঁচা তাড়াতাড়ি এসে চোখ খুলে হাপাতে হাপাতে বললে, “অনেক দূর থেকে আসতে হয়েছে, বিলম্ব হয়ে গেল।” চিলে পেচা চেচিয়ে বললে, “সেইজন্যেই ত্বর করা তার উচিত ছিল।”
সব পেঁচা একত্র হয়েছে, তখন হুতুম গম্ভীরভাবে বললেন, “কাজ আরম্ভ হবার আগে এসো ভাই সব এককাট্ট হয়ে এক স্বরে নিজের নিজের ঢাকের বান্তি বাজিয়ে দিই,“হুতুম-ঘুম,তুহুম-কুম। লাগ লাগ ঘুট। লাগ লাগ ঘুট। দে ধুলো, দে ধুলো, দে ধুলো, চোর-আ-আ গো-ফ-তা।” সমস্ত রাত্রিটার অন্ধকার বিকট শব্দে ভ'রে দিয়ে পেচাগুলো ডানা ঝাপটাতে লাগল, আর অন্ধকারের জয় দিতে থাকল,
ঘুটঘুটে আঁধারে
আমরা খুলি চোখ,
—যত লাল চোখ।