পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
আলোর ফুলকি

ডাক দেয় আর অমনি আমায় সরতে হয়।” কাল পেঁচা বললে, “পেটের খিদে ভালো করে মেটাবার জো নেই সেটার জ্বালায়।” কেউ বললে, “তাঁর সাড়া কানে এলেই আর মাথা ঠিক রাখতে পারি নে, এটা করতে ওটা করে ফেলি। খুন করতে হয় মশায় তাড়াতাড়ি। যেন আমারি দায় পড়েছে। জখমগুলোও যে একটু শক্ত করে বসাব তার সময় পাই নে মশায়। যতটুকু মাংস দরকার তার বেশি একটু কি সংগ্রহ করবার জো আছে ওটার জালায়। ওর গলাটা শুনলেই দেখিযেন অন্ধকার দেখতে-দেখতে ফিকে হচ্ছে, আর আমি ভয়ে একেবারে কেঁচো হয়ে যাই।”

 চড়াই শুনে শুনে বললে, “আচ্ছা সব দোষ কি কুঁকড়োর। এ-পাড়াও-পাড়ায় আরো তো অনেক মোরগ আছে যারা ডেকে থাকে।”

 হুতুম বললে, “তাদের গানকে আমরা ভয় করি নে। ওই কুঁকড়োর ডাকটাই যত নষ্টের গোড়া, সেইটেই বন্ধ করা চাই।”

 সবাই অমনি চেচিয়ে উঠল, “বন্ধ হোক। বন্ধ হোক। চাই বন্ধ করা চাই।” আর ডান। বাজাতে লাগল। গোলমাল একটু থামলে গো-পেচ বললে, “তা যাই বল, চড়াই আমাদের জন্যে অনেক করেছেন।” চড়াই ভয় পেয়ে বললে, “কী, কী, আমি আবার বললেম কী, ও আবার কেমন কথা?” খুদে পেচা বললে, “কুঁকড়োর নিন্দে রটিয়ে তার নকল দেখিয়ে তামাশ করে।” অমনি দেউলে, দালানে, গুড়গুড়ে, গোয়ালে, গেছে, জংলা, পাহাড়ে সব পেচা হাসতে লাগল “হুঃ হুঃ ঠিক ঠিক, বা বা, ঠিক ঠিক, হু হু হু হু হু-উ-উ, খুব ঠিক খুব ঠিক।”

 হুতুম রোয়া ফুলিয়ে পাখী ঝাপটালে,“বসস-স।” অমনি সব চুপ হয়ে গেল। চিলে পেঁচা গলা কাঁপিয়ে চিঁ চিঁ করে বললে, “তার নিন্দেই রটাও আর নকলই দেখাও সে তো তাতে থোড়াই ডরায়। বেপরোয়া সে গান গেয়ে চলে, আর বেকার আমরা কেঁপেই মরি। এই দেখে-না সাজগোজ হীরে-জহরতের দিক দিয়ে দেখলে ময়ূরের সামনে কুঁকড়োটা দাড়াতেই পারে না, কিন্তু তবু তার গান, সে তো এখনো আমাদের জালাতে ছাড়ছে না।” সব পেঁচা বিকট চীৎকার করতে থাকল, “ধরে কুঁকড়োকে। মারো কুঁকড়োকে, ধুমাধুম ধুমাধুম।”

 হুতুম চটপট ডান ঝেড়ে খাড়া হয়ে দাড়িয়ে সবাইকে বললে,“থামোথামো শোনো শোনে,