পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৩৭

চুপ। কুটুরে ক্রমেই মাথা হেঁট করতে লাগল। কে যেন তার ঘাড় ধরে মাটিতে মুখ ঘষেদিতে চাচ্ছে। এতক্ষণ পেঁচা-সব রোঁয়া ফুলিয়ে বিকট চেহার করে বসে ছিল, দেখতে দেখতে ফুটে রবারের গোলার মতো চুপসে গেল, যেন কতদিন খায় নি। মুখে কারু কথা সরছে না, কেবল চোখ পিটপিট করে এ ওকে শোধাচ্ছে, “হল কী। কী ব্যাপার।” তার পর ডানা মেলে একে একে সবাই পালায় দেখে চড়াই বললে, “এরি মধ্যে চললে নাকি।” চড়ায়ের কথা কে-ইবা শোনে। চড়াই যত বলে, “ভোর হতে এখনো দেরি, চলুক না ঘোট আরো খানিক।” সব পেচা চোখ পিটপিট করে বলে, “না না না, আর না, আর না, আর না।” হুতুম বললে, “গেলুম।” ধুঁধুল বললে, “মলুম।” “বাঁচাও বঁচিাও।” বলছে আর-সব পেচাগুলো। তাড়াতাড়িতে কোথায় যাবে, কী করবে ঠিক পাচ্ছে না, কানার মতো কখনো কাট-গাছে গিয়ে পড়ছে, কখনো পাথরে টক্কর খাচ্ছে। আর ডানা দিয়ে চোখ-মুখ ঘষছে আর বলছে, “উঃ গেছি। উঃ গেছি।” “লাগছে লাগছে।” বলতে বলতে একে একে সব পেচা চম্পট দিলে। সব-শেষ হুতুম পেচাট “গেলুম। গেলুম।” বলতে বলতে উড়ে পালাল।

 চড়াই দেখলে অন্ধকারের মধ্যে কালে কালো নৌকার মতো দলে-দলে পেচাগ্রাম ছাড়িয়ে ক্রমে পাহাড়ের গায়ে মিলিয়ে গেল। আর কেউ কোথাও নেই, পাকুড়তলা সে একা রয়েছে। “ফজর তো হল এখন ছোটো হাজরির জন্তে একটা গঙ্গা ফড়িং পেলে হয় ভালো।” ব’লে চড়াই এদিক ওদিক করছে, এমন সময় একটা ঝোপের আড়াল থেকে ঝপ করে সোনালিয়া বেরিয়ে এল। চড়াই অবাক হয়ে বললে, “একি। এত রাত্রে আপনি এখানে ৷”

 সোনালিয়া একটু দূরে থেকে পেচাদের যুক্তি সমস্ত শুনেছিল, সে হাপাতে হাপাতে বললে, “কী ভয়ানক ব্যাপার, চড়াই তো কুঁকড়োর বন্ধু, এখন বন্ধুকে বাচাতে চেষ্টা তো তার করা উচিত।” চড়াই আবার ফড়িং-এর সন্ধান করতে করতে বললে, “পেঁচা ভাজা খেতে কী মজা তা পাখিজন্মে তারা কেউ জানলে না—।”

 সোনালিয়া অবাক হল। চড়াইটার রকম দেখে সে রেগে বললে, “কথার জবাব দাও-না।” “কীঃ” ব’লেই চড়াই ফিরে দাড়াল। সোনালি শুধলে, “ঘোঁটের খবর জানতে চাচ্ছি।” চড়াই ধীরে সুস্থে উত্তর করলে, “ঘোঁটটা খুব চলেছিল, সব দিকেই ভালো।”