যেন বলা না হয় সোনালিকে সে বিষয়ে সাবধান করে দিয়ে, চড়াই আস্তে আস্তে বাবলা গাছের তলায় একটা খালি ফুলের টবের আড়ালে গিয়ে লুকোল।
৫
কুঁকড়ো নিজে যেমন, তেমনি কাউকে ভোরে উঠতে দেখলে ভারি খুশি। সোনালিয়াকে দেখে বললেন, “বাঃ তুমি তো খুব সকালে উঠেছ। বেশ, বেশ।” কিন্তু সোনালিয়া চিনেমুরগির চা-পার্টতে যাবার জন্যেই খালি আজ এত সকালে বিছেন ছেড়ে বেরিয়েছে শুনে কুঁকড়ো ভারি দমে গেলেন। কুঁকড়ে পষ্ট বললেন, তিনি ওই চিনে-মুরগিটাকে ছ'চক্ষে দেখতে পারেন না। কিন্তু সোনালিয়া ছাড়বার নয়, সে তবু কুঁকড়োকে চিনে-মুরগির মজলিসে যেতে পেড়াপিড়ি করে বললে, “দেখি তুমি আমার কথা রাখ কি না।”
কুঁকড়ে। তবু যেতে রাজি নয়, তখন সোনালিয়া অভিমান করে বললে, “তবে আমি এখনি বাড়ি চলে যাই।” কুঁকড়ে তাড়াতাড়ি বলে ফেললেন, “ন সোনালি, এখনি যেয়ে না।” সোনালি অমনি সুযোগ বুঝে বললে, “তবে যাবে বলে চিনি-দিদির বাড়িতে।” কুঁকড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “আচ্ছা তাই, আমিও যাব।” কথাটা ব'লেই কুঁকড়ে মনে মনে নিজের উপর খুব চটলেন, মেয়ের যা আবদার করবে, তাই কি মানতে হবে।
সোনালি কুঁকড়োর ভাব বুঝে মনে মনে হাসতে লাগল। কুঁকড়োকে চিনি-দিদির বাড়িতে নিয়ে যেতে সে খুব ব্যস্ত ছিল না; সে কুঁকড়োর কাছ ঘেঁষে বললে, “তোমার সেই মন্তরের কথাটি বলো-না শুনিই-ই—।”
কুঁকড়ে একটু গম্ভীর হলেন, সোনালি বললে, “বলো-না, বলোবলো, বলো-না।”
কুঁকড়ে এবারে গদগদম্বরে “সোনালি আমার মনের কথাটি” বলে আবার চুপ করলেন। সোনালি বলে চলল, “বনের মধ্যে বসন্তকালের চাদনিতে সারারাত কাটিয়ে একলাটি আমি বনের ধারে এসে দাড়িয়েছি, সকালের আলো আকাশে ঝিলিক দিয়ে উঠল, আর আমনি শুনলেম, তোমার ডাক দূর থেকে আসছে, যেন দূরে কার বাঁশি বাজছে।”— বনের রানী