মাটি আঁচড়াতে প্রায়ই দেখি বটে।”
কুঁকড়ো বললেন, “মাটি আঁচড়াবার অর্থ আছে। তুমি কি মনে কর, আমি মাটি আঁচড়াই মাসকলাই সংগ্রহ করতে। সে করে মুরগিরা, আমি মাটি আঁচড়ে দেখি, কোন মাটি আমার উপযুক্ত দাড়াবার বেদী হতে পারে। আমি জানি, গান গাওয়া মিছে হবে যদি না ইট-পাটকেল ঘাস কুটো কাটা সব সরিয়ে এই পুরানো পৃথিবীর কালে মাটির পরশখানি নিতে ভুলি। পৃথিবীর বুকের খুব কাছে দাড়িয়ে মাটির সঙ্গে নিজেকে একেবারে মিলিয়ে তবে আমি গান করি। সোনালিয়া, প্রায় সবই তো শুনলে, আরো যদি জানতে চাও তে। বলি, আমাকে স্বর খুজে খুজে তো গান গাইতে হয় না, সুর আপনি ওঠে আমার মধ্যে, মাটি থেকে লতায় পাতায় রস যেমন ক’রে উঠে আসে, গানও তেমনি করে আমার মধ্যে ছুটে আসে আপনি, জন্মভূমির বুকের রস। পুব আকাশের তীরে সকালটি ফুটি-ফুটি করছে, ঠিক সেই সময় আমার মধ্যে উথলে উঠতে থাকে স্বর আর গান, বুক আমার কাপতে থাকে তারি ধাক্কায়, আর আমি বুঝি, আমি না হলে সরস মাটির এই সুন্দর পৃথিবীর বুকের কথা খুলে বলাই হবে না। সকালের সেই শুভ লগ্নটিতে মাটি আর আমি যেন এক হয়ে যাই, মাটির দিকে আমি আপনাকে নিয়ে যাই, আর পৃথিবী আমাকে সুন্দর শাখের মতো নিজের নিশ্বেসে পরিপূর্ণ করে বাজাতে থাকে, আমার মনে হয় তখন আমি যেন আর পাখি নই, আমি যেন একটি আশ্চর্য বাঁশি, যার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর কান্না আকাশের বুকে গিয়ে বাজছে।
“অন্ধকারের মধ্যে থেকে ভোর রাতের হিম মাটি এই যে কাদন জানাচ্ছে, আকাশের কাছে তার অর্থ কী সোনালিয়া, সে আলো ভিক্ষে করছে, একটুখানি সোনার আলো-মাখা দিন তারি প্রার্থনা, ভোর বেলার সবাই কাদছে, দেখবে, আলো চেয়ে, গোলাপের কুঁড়ি সে অন্ধকারে কাদছে আর বলছে, আলো দিয়ে ফোটাও। ওই যে খেতের মাঝে একটা কাস্তে চাষারা ভুলে এসেছে, সে ভিজে মাটিতে পড়ে মরচে ধীরে মরবার ভয়ে চাচ্ছে আলো, একটু আলো এসে যেন রামধনুকের রঙে চারি দিকের ধানের শিষ রাঙিয়ে দেয়।
“নদী কেঁদে বলছে, আলো আমুক, আমার বুকের তলা পর্যন্ত গিয়ে আলো পড়ক। সব জিনিস চাচ্ছে যেন আলোয় তাদের রঙ ফিরে পায়, আপনার আপনার হারানো ছায়া ফিরে <
৬