পায়, তারা সারারাত বলছে, আলো কেন পাচ্ছি নে, আলো কী দোষে হারালেম।
“আর আমি কুঁকড়ো তাদের সে কান্না শুনে কেঁদে মরি, আমি শুনতে পাই ধান খেত সব কাদছে, শরতের আলোয় সোনার ফসলে ভরে ওঠবার জন্তে, রাঙা মাটির পথ সবর্কাদছে, যারা চলাচল করবে তাদের ছায়ার পরশ বুকের উপর বুলিয়ে নিতে আলোয়। শীতে গাছের উপরের ফল আর গাছের তলার গোল গোল মুড়িগুলি পর্যন্ত আলো তাপ চেয়ে কাদছে, শুনি। বনে বনে সূর্যের আলোক কে না চাচ্ছে বেঁচে উঠতে জেগে উঠতে, কে না আলোর জন্তে সারা রাত কাঁদছে। এই জগৎমৃদ্ধ সবার কান্না আলোর প্রার্থনা এক হয়ে যখন আমার কাছে আসে তখন আমি আর ছোটো পাখিটি থাকি নে, বুক আমার বেড়ে যায়, সেখানে প্রকাও আলোর বাজনা বাজছে শুনি, আমার দুই পাজর কাঁপিয়ে তার পর আমার গান ফোটে, “আ-লো-র ফুল”। আর তাই শুনে পুবের আকাশ গোলাপী কুঁড়িতে ভরে উঠতে থাকে, কাকসন্ধ্যার কী কী শব্দ দিয়ে রাত্রি আমার গানের স্বর চেপে দিতে চায়, কিন্তু আমি গেয়ে চলি, আকাশে কাগডিমে রঙ লাগে তবু আমি গেয়ে চলি আলোর ফুল, তার পর হঠাৎ চমকে দেখি আমার বুক সুরের রঙে রাঙা হয়ে গেছে আর আকাশে আলোর জবাফুলটি ফুটিয়ে তুলেছি আমি পাহাড়তলির কুঁকড়ে।”
সোনালি অবাক হয়ে বললে, “এই বুঝি তোমার মস্তর।”
“হাঁ, সোনালি, মন্তরটা আর কিছু নয়, আমি না থাকলে পুব আকাশে সব আলো ঘুমিয়ে থাকত এই বিশ্বাসটা আমি করতে পেরেছি এইটুকুই আমার ক্ষমতা, তা একে মন্তরই বলে বা তস্তরই বলে কিংবা অন্তরই বলো”, ব’লে কুঁকড়ো এমনি ঘাড় উচু ক’রে বুক ফুলিয়ে দাড়ালেন যে মনে হল যেন তিনি বলছেন— “ঘাড় হেঁট হয় এমন কাজ আমি করি নে, আমি নিজের গুণগান করে বেড়াই নে, আমি আলোর জয়-জয়কারই দিই, আমি জোরে গাই নিজের গলার রেশ নিজে শোনবার জন্তে নয়, আমি জোরে গাই আলোতে সব পরিষ্কার হয়ে ফুটবে বলে। কুঁকড়ে যতক্ষণ ব’লে চলেছিলেন ততক্ষণ সোনালি সব ভুলে তার কথাই শুনছিল, এখন কুঁকড়ে চুপ করতে তার চটকা ভেঙে গেল, কুঁকড়োর কথায় তার অবিশ্বাস হল; সে বলে উঠল, “একি পাগলের কথা। তুমি, তুমি ফুটিয়ে দাও আকাশে...”