পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৪৩

 “সেই জিনিস যা চোখের পাতা মনের দুয়ারে এসে ঘুমের ঘোমটা খুলে দেয়। আকাশ যেদিন মেঘে ঢাকা, সেদিন জানব, আমি ভালো গাই নি।” -

 “আচ্ছা, তুমি-যে দিনের বেলাও থেকে থেকে ডাক দাও, তার অর্থটা কী শুনি।” সোনালি শুধল। - -

 কুঁকড়ো বললেন, “দিনের বেলায় এক-একবার গলা সেধে নিই মাত্র। আর কখনো-বা ওই লাঙলটাকে নয়তো কোদালটাকে ওই টেকি ও ওইখানে ওই কুড়ল এই কাস্তেকে বলি, ভয় নেই, আলোকে জাগিয়ে দিতে ভু-ল-ব-না ভু-ল-ব-না।”

 সোনালি বললে, “ভালো, আলোকে যেন তুমি জাগালে, কিন্তু তোমাকে ঠিক সময়ে জাগিয়ে দেয় কে, শুনি?”

 “পাছে ভুল হয়, সেই ভয়েই আমি জেগে উঠি।”

 কুঁকড়োর জবাব শুনে সোনালির তকরার করবার কোক বাড়ল বৈ কমল না; সে বললে, “আচ্ছ, তুমি কি মনে কর, সত্যি তোমার গানে জগৎ জুড়ে আলোর বান ডাকে?”

 কুঁকড়ো বললেন, “জগৎ জুড়ে কী হচ্ছে তার খবর আমি রাখি নে, আমি কেবল এই পাহাড়তলিটির আলোর জন্য গেয়ে থাকি, আর আমার এই বিশ্বাস যে এ-পাহাড়ে যেমন আমি ও-পাহাড়ে তেমনি সে, এমনি এক-এক পাহাড়তলিতে এক-এক কুঁকড়ো রোজ রোজ আলোকে জাগিয়ে দিচ্ছে।” সোনালির সঙ্গে কথা কইতে রাত ফুরিয়ে এল। কুঁকড়ে দেখলেন, সকালের জানান দেবার সময় হয়েছে, তিনি সোনালিকে বললেন, “সোনালি, আজ তোমার চোখের সামনে সূর্য ওঠাব, আমাকে পাগল ভেবো না, দেখে এবং বিশ্বাস করে। আজ যে গান আমার বুকের মধ্যে গুমরে উঠছে,তেমন গান আমি কোনোদিন গাইনি, গানের সময় আজ তুমি কাছে দাড়াবে, আমার মনে হচ্ছে, আজ সকালটি তাই এমন আলোময় হয়ে দেখা দেবে যে তেমন সকাল এই পাহাড়তলিতে কেউ কখনো দেখে নি সোনালিয়া।” বলে কুঁকড়ে ঢালুর উপরে গিয়ে দাড়ালেন। নীল আকাশের গায়ে যেন আঁকা সেই কুঁকড়োকে কী সুন্দরই দেখাতে লাগল। সোনালি মনে মনে বললে, ‘একে কি অবিশ্বাস করতে পারি।” এইবার কুঁকড়ো সোজা হয়ে দাড়ালেন, গায়ের রঙিন পালক ঝাড়া দিয়ে। সোনালি দেখলে, তার মাথার মোরগ-ফুলটা যেন আগুনের শিখার