পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৪৫

সব পাহাড়ে পাহাড়ে গোলাপী ফুলে ভর পদম্ গাছ ছবির মতো খুলে গেল সোনালির চোখের সামনে। “খুলুক খুলুক”, দূরে ঝাপসা পাহাড় কুয়াশার চাদর খুলে যেন কাছে এসে দাড়াল। দূরের কাছের সব জিনিস ক্রমে পরিষ্কার হয়ে উঠছে, অন্ধকার থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে, নতুন করে আলো-ছায় দিয়ে গড় এক টুকরো পৃথিবী। শুকনো ছড়ি থেকে ফলন্ত আমগাছ গড়বার সময় ছেলেরা যেমন সেটার দিকে ই ক'রে চেয়ে থাকে সোনালি তেমনি কুঁকড়োর এই-সব কাগুকারখানা অবাক হয়ে দেখছিল, আর ভাবছিল কুঁকড়োই বুঝি এ-সবের ছিষ্টিকত্তা, এমন সময় কানের কাছে শুনলে, “মোন, বলে ভালোবাস তো?”

 সোনালি খানিক চুপ করে থেকে বললে, “অন্ধকার থেকে এমন সকাল যে উঠিয়ে আনলে, তার সঙ্গে মনের কথা চালাচালি করতে কে না ভালোবাসে।”

 কুঁকড়ো বললেন, “সরে এসো সোনালি, বুক তুমি আনন্দে ভরে দিয়েছ, তোমাকে পেয়ে আজ কাজ মনে হচ্ছে কত সহজ” এই ব'লে কুঁকড়ে ডাকলেন, “আলোর ফুলকি সোনালি”, সোনালি অমনি কুঁকড়োর একেবারে খুব কাছে এসে বললে,”ভালোবাসি গো ভা-লো-বা-সি।” কুঁকড়ে বললেন, “সোনালিয়া, তোমার সোনালিয়া রূপটি সোনালি কাজলের মতো আমার চোখের কোলে লাগল, তোমার মধুর মতে মিষ্টি আর সোনালি কথা প্রাণের মধ্যেটা সোনায় সোনায় ভরে দিয়েছে। এত সোনা আজ পেয়েছি যে মনে হচ্ছে এখনি ওই সামনের উচু পাহাড়টা আমি আগাগোড়া সোনায় মুড়ে দিতে পারি।” সোনালিয়া আদর করে বললে, “দাও-না পাহাড়টা গিলটি করে, আমি তোমাকে রোজ রোজ ভালোবাসব।” কুঁকড়ে হাক দিলেন, “সোনা-র জল সো-না-লি-য়া”, অমনি পাহাড়ের চুড়োয় সোনা ঝকঝক করে উঠল, তার পর সোনা গ’লে ঢালু বেয়ে আস্তে আস্তে নীচের পাহাড়ের গোলাপীতে এসে মিশল, শেষে গোলাপী ছাপিয়ে একেবারে তলায় মাঠের উপর গড়িয়ে পড়ল। দেখতে দেখতে দূর আর কাছের রাস্তা-ঘাট মাঠ-ময়দান ঘর-ভুয়োর গ্রাম-নগর বন-উপবন সোনাময় হয়ে দেখা দিলে। কিন্তু দূরে পাহাড়ের গায়ে এখানে ওখানে নদীর ধারে গাছগুলোর শিয়রে এখনো একটু-আধটু কুয়াশ মাকড়সার জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে, ওগুলো তো থাকলে চলবে না, কুঁকড়ো প্রথম আস্তে বললেন, “সাফাই”, সোনালি ভাবলে, কুঁকড়ো বুঝি হাঁপিয়ে