পড়েছেন আর বুঝি পারেন না গান করতে, কিন্তু একি যে-সে কুঁকড়ো যে কাজ বাকি রেখে যেমন-তেমন সকাল করেই ছেড়ে দেবে, “আরো আলো চাই” বলে কুঁকড়ো আবার গা-ঝাড় দিয়ে এমন গল। চড়িয়ে ডাক দিলেন যে মনে হল বুঝি, তার বুকটা ফেটে গেল, “আলোর ফুল আলোর ফুল, ফু-উ-উ-উল-কি-ই-ই আলো-র-র-র-র”। দেখতে দেখতে আকাশের শেষ তারাটি সকালের আলোর মধ্যে একেবারে হারিয়ে গেল, তার পর দূরে দূরে গ্রামের কুটিরের উপর জলন্ত আখার সাদা ধুয়ো কুণ্ডলী পাকিয়ে সকালের আকাশের দিকে উঠে চলল আস্তে আস্তে। সোনালি তাকিয়ে দেখলে কুঁকড়ো কী মুন্দর। সে সকালের শিল্পী কুঁকড়োকে মাথা নিচু ক’রে নমস্কার করলে। আর কুঁকড়ো দেখলেন, আলোর ঝিকিমিকি আঁচলের আড়ালে সোনালিয়ার মুন্দর মুখ। কুঁকড়ো মোহিত হলেন। আজ তাঁর সকালের আরতি সার্থক হল, তিনি এক আলোতে তাঁর জন্মভূমিকে আর তাঁর ভালোবাসার পাখিটিকে সোনায়সোনায় সাজিয়ে দিলেন। কুঁকড়ো আনন্দে চারি দিকে চেয়ে দেখলেন, কিন্তু তখনো কেন মনে হচ্ছে, কোথায় যেন একটু অন্ধকার লুকিয়ে আছে। তিনি আবার ডাক দিতে যাবেন, এমনি সময় নীচের পাহাড় থেকে একটির পর একটি মোরগের ডাক শোনা যেতে লাগল; যে যেখানে সবাই সকালের আলো পেয়ে গান গাচ্ছে। আগে আলো হল, পরে এল সব মোরগের গান, কুঁকড়ো কিন্তু সবার আগে যখন আলো ব’লে ডাক দিয়েছেন, তখনে। রাত ছিল, তিনি যে সবার বড়ো তাই অন্ধকারের মাঝে দাড়িয়ে তিনি আলোর আশা সবাইকে শোনাতে পারেন। আলো জাগানো হল, এইবার সূর্যকে আন চাই, কুঁকড়ে আবার শুরু করলেন, “রাঙা ফুল আগুনের ফুলকি", অমনি দিকে দিকে সব মোরগ গেয়ে উঠল সেই স্বরে, “আলোর ফুলকি, আলোর ফুল।” সোনালি বললে,“দেখেছ ওদের আস্পর্ধা। তোমার সঙ্গে কিনা মুর ধরেছে, এতক্ষণ সবাই ছিলেন কোথা?”
কুঁকড়ো বললেন, “তাহোক, স্বর বেম্বর সব এক হয়ে ডাক দিলে যাচাই তাপেতে বেশি দেরি হয় না, সূর্য দেখা দিলেন ব'লে।” কিন্তু তখনো কুঁকড়ে দেখলেন একটি কুটির ছায়ায় মিশিয়ে রয়েছে, তিনি হাক দিলেন অমনি কুটিরের চালে সোনার আলো লাগল। দূরে একটা সরষে খেত