সোনালি হেসে বললে, “না, চড়াইকেও যে তুমি পাগলা করলে” বলে সোনালী পাখি সোনালী ডান মেলে উড়ে গেল। কুঁকড়ো চড়াইয়ের দিকে চেয়ে ভাবছেন, জিন্ম একে দেখতে পারে না, কিন্তু চড়াইট নেহাত মন্দ নয়, একটু বক্তার বটে, কিন্তু বদমাশ তো নয়।
চড়াই এবার লেজ নেড়ে বললে, “বলিহারি তোমার বুদ্ধিকে, সব মুরগিগুলোকে বিশ্বাস করিয়েছে যে তুমিই সূর্যোদয় করে থাক, মেয়েদের চোখে ধুলো দিতে তোমার মতো দুটি নেই, এতদিনে বুঝলেম মুরগিরাকেন তোমার অত প্রশংসা করে। হয় কলম্বস যে ডিমটি নিয়ে রাজাকে ডিমের বাজি দেখিয়েছিলেন সেই ডিমটি থেকে তুমি বেরিয়েছ, নয়তো সিন্ধবাদ যে আজগুবি সামোরগের ডিমের গল্প লিখে গেছে, তারি তুমি বাচ্ছ, এ না হলে তুমি আলোর আবিষ্কর্তা হতে না আর মুরগিদের এমন আজগুবি কথা শুনিয়েও ভোলাতে পারতে না। অণু পরমাণুদের জন্তে আলোর দোলন, খড়ের চালে সোনার পোচ, এ-সব খেয়াল কি যে-সে মাথা থেকে বার হয়, না আপনাকে অতি দীন অতি হীন ব’লে চালিয়ে যেমনি দিন এল বলে অমনি আলোর ফুল ব'লে চেচিয়ে উঠে ঝোপ বুঝে কোপ মেরে যাওয়া যার-তার কর্ম।”
রাগে কুঁকড়োর দম বন্ধ হবার জোগাড় হচ্ছিল, তিনি অতি কষ্টে বললেন, “থামো, চুপ।”
চড়াই তু-পাপিছিয়ে গিয়ে বললে, “আচ্ছ, সত্যি কি তুমি জান না যে দিন-রাত যে আসে সেটা একটা প্রকৃতির নিয়ম ছাড়া আর কিছু নয়?”
কুঁকড়ো বললে, “তুমি জানতে পার আমি জানি নে। আর যাই নিয়ে ঠাট্টা কর, করে, এ কথা নিয়ে আর কোনোদিন তামাশা কোরো না যদি আমার উপর তোমার একটুও মায়া থাকে।”
চড়াই মুখে বললে, খুব মায়া খুব শ্রদ্ধা সে কুঁকড়োকে করে কিন্তু তবু খোচা দিয়ে ঠেস দিয়ে কথা সে বলতে ছাড়ছে না, তর্কও করতে চায়।
কুঁকড়ো রেগে বললেন, “কিন্তু যখন আমি ডাক দিতেই সূর্য উঠল আলো হল, সে আলো পাহাড়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে গেল, আকাশে নানা রঙ ধরলে তখনো কি একবার তোমার মনে হয় না যে এ-সব কাণ্ড করলে কে।”