পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
আলোর ফুলকি

একবার ওই ওদিকটায় ঘাড় তুলে দেখে বললে, “সব ঠিক। আসছে তারা।” এদিকে চিনি-দিদি সোনালিকে নতুন বিলিতি কলে-দিয়ে-ফোটানে দুটি মুরগির ছানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, এমন সময় দূরে ময়ুর গলা-খাকানি দিলেন, “কেও, চিনি নাকি।” ময়ুর এসে বুক ফুলিয়ে দাড়ালেন; মুরগি, হাস, তিতির, বটের সব অমনি তাকে ঘিরে যেন রথ দেখবার ভিড় করলে। ময়ুর সবাইকে জাকালো পোশাক আর হীরে জহরতের ভাউ বাংলাতে লাগলেন, খুব বুদ্ধিমানের মতো গম্ভীর মুখ ক’রে। জিন্ম কুত্তানি কিন্তু ময়ূরকে দেখে মনেমনে বললে, “এটার মতো দেমাকে অদ্ভূত জানোয়ার আর ত্বটি দেখা যায় না।’ এমন সময় কাক দরজা থেকে ফোকরালেন, “চাটগাঁই মোরগ।” চিনি-দিদি এ-নাম কখনো শোনেন নি; বুঝি-বা ভুল করেছে কাকট ভেবে সেদিকে যাবেন, এমন সময় সত্যিই সাদা জোববী-খাববী, কালে চাপদাড়ি মোড়াসা-মাথায় চাটগাই এসে সেলাম করলেন। চিনি-দিদির মুখে আর কথা সরল না। তার পর কাক একে একে সব অদ্ভুত মোরগের নাম ফোকরাতে থাকল, “সিংগালি, বোগদাদি, জাপানি।” সবাই বলে উঠল, “একি ব্যাপার।” চিনি-দিদি বেড়ার ফাক দিয়ে দেখলেন দলে দলে অদ্ভূত মোরগ সব আরো আসছে, “সেলেম সাহি, খ খাননি, তখতে তাউস, কান্দাহারি, কাবুলী, জবরদস্ত ঝোঁটনদার, চম্পাধাড়ি, কুলকুটি, খুঞ্চেপোষ, ডেগচি, মোগলাই, জবড়জঙ্গ, ইয়াহুদি, চাল বাহাদুর, খেতাববক্স, মেজাজি, পরন্থস্বা, মুলুকচাদি, বাজখাই, শির-ই-ফরহাদ, গোলগুম্বজ, কাবাবি।”

 চিনি-দিদি দেখে শুনে অবাক, কেবল লেজ দোলাচ্ছেন আর বলছেন, “ওমা কোথায় যাব। ওলো দেখ, কী হবে গো, এমন তো কখনো দেখি নি।”

 নবাবী আমলের মোরগ সব একে একে এলেন। এবার পাটনাই মোরগ সব আসছেন, “তিলকধারী ভোজপুরি, রামদুলালি।”

 “ওমা কোথায় যাব।” বলে চিনি-দিদি সবাইকে খাতির করতে ছুটলেন।

 এবার গৌড়িয়া মোরগ সব আসছেন, “গোবরগণেশ, চালপিটুলি, মোহনভোগ, বামুনমারি, কানাইচুড়ে, চৌগোপলা, টেকুচকুচ, ঢাক-পিটুনে, ফিকুরে গোসাই, বেঁটেবঙ্কট, কয়লাধাম, রাজকুমড়ো, থুতি নাতি।”