আর কুঁকড়োর কাছে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে। পাখিরা কখন কিভাবে থাকে জিম্মার বেশ জানা ছিল, সে কুঁকড়োকে চুপি চুপি বললে, “আমার তো বোধ হয় না ওরা তোমার প্রাণের জন্যে ভয় পেয়েছে একটুও। ভয় ওইদিক থেকে আসছে শিকরে রাজ হয়ে, আর সেটা এসে ঘাড়ে পড়বার আগে সব পাখিরা চিরকাল যা করে থাকে, আজও ঠিক তাই করছে।”
কুঁকড়ো দেখলেন আকাশের অনেক উপরে থেকে সত্যিই বাজপাখি ঘুরে ঘুরে নামছে। তার কালো ছায়াটা যেন কালো হাতের মতো একবার খানিকক্ষণ ধ’রে সব পাখিদের উপর দিয়ে যেন তাদের এক-একে গুনতে গুনতে এক পাক ঘুরে গেল; আমনি সব পাখি ভয়ে জড়োসড়ো, আর-এক পা কুঁকড়োর দিকে এগিয়ে এল। বিপদের সময় কুঁকড়োর আশ্রয় তারা চিরকাল না চেয়েও যে পেয়েছে, বাজ অনেক বার পড়ে পড়ো হয়েছে, আর অনেকবারই কুঁকড়ো সেটাকে সরিয়ে দিয়েছেন, এবারও তা হবে না কেন। কুঁকড়ো সেই রক্তমাখা বুক ফুলিয়ে সত্যিই সোজা হয়ে দাড়ালেন, তার পর ঘাড় তুলে হুকুম হাকলেন, “আয় তোরা আয়, কাছে আয়, বুকে আয়, ভয় নেই,ভয় নেই।” আমনি বাচ্ছাগুলোকে ডানার মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে সবাই কে কার ঘাড়ে পড়ে, ছুটে এসে কুঁকড়োর গা ঘেঁষে দাড়াল কাতারে কাতারে সব পাখি। পোশাকী মোরগগুলোর কাছে কেউ গেলও না, তাদের আশ্রয়ও কেউ চাইলে না। কেননা পোশাকী তারা নিজেরাই ভয়ে কঁপিছিল এ-ওকে জাপটে ধ’রে। বাজের ছায়া আবার সবার উপর দিয়ে ঘুরে চলল, এবারে আরো কালো, আরো বড়ো; আর সবাই এমন-কি পালোয়ান হায়দারি পর্যন্ত ভয়ে গুটিয়ে যেন পালকের পুটলিটি। কেবল সবার উপরে মাথার মোরগফুল লাল নিশেনের মতো উচু ক'রে দাড়িয়ে রয়েছেন কুঁকড়ো, রক্তমাখা বুক ফুলিয়ে। বাজপাখি আর-এক পাক ঘুরে এল, এবার সে একেবারে কাছে এসেছে, কালবোশেখের মেঘের মতো কালো হয়ে উঠেছে তার ভয়ংকর কালো ছায়া; সমস্ত যেন অন্ধকার করে আসছে সেটা আস্তে আস্তে। ভয়ে মায়ের বুকের মধ্যে বাচ্ছাগুলো পর্যন্ত কাঁদতে থাকল। সেই সময় কুঁকড়োর সাড়া আকাশ ভেদ করে উঠল, “অবতক হাম জিন্দা হ্যায়,অবতক হাম দেখতা হ্যায়, অব তক্ হাম মালেক হ্যায়...।”
অমনি দেখতে দেখতে বাজের ছায় ফিকে হতে হতে কোথায় মিশিয়ে গেল। আকাশ যে