পরিষ্কার সেই পরিষ্কার নীল ঝকঝক করছে। আহলাদে পাখিরা সব আবার গা ঝাড়া দিয়ে যে যার জায়গায় উঠে বসে বললে, “এইবার আবার কুস্তি চলুক।” জিম্মা অবাক হয়ে গেল; কুঁকড়োর মুখে কথা সরল না, সোনালি বললে, “তুমি ওদের বাচালে আর ওরা তার পুরস্কার দেবে না? বাজ দেখালে ভয়, তার শোধ তুলবে ওরা তোমায় মেরে” কিন্তু কুঁকড়ো জানেন আর তাঁর মরণ নেই; যে-পাখিকে সবাই ভয় করে, সেই বাজের কালো ছায়া তিনবার তাঁর মাথার উপর দিয়ে ঘুরে গেছে, ভয় থেকে তিনি সবাইকে বাচিয়েছেন, এখন নিজে তিনি নির্ভয়ে যুদ্ধের জন্যে এগিয়ে এসে হায়দারিকে এক গোত্ত বসিয়ে বললেন, “আও।” গোত্তা খেয়ে হায়দারি ঠিকরে বেড়ার উপর গিয়ে পড়ল। এবার ইস্পাতের পেরেকআঁটা কাতান কুঁকড়োর উপর চালারার মতলব ক’রে সে ছপায়ে বাঁধা ছোরাছটোয় শান দিয়ে নিতে লাগল। বেরাল গাছের উপর থেকে হায়দারিকে বললে, “কেঁও মিঁয়া।”
চড়াই বললে, “কাতানি কাটকাটানি।”
জিন্ম বললে, “চালাক দেখি, ও কাতান, ওর টুঁটি ছিঁড়ব না।”
আবার কুস্তি চলল। জিন্মা দেখছে হায়দারিটা ছোরা না চালায়, এমন সময় হঠাৎ হায়দারি সঁ। ক’রে ছোরা উচিয়ে ‘লেও ব’লেই যেমন কুঁকড়োকে কাতান বসাবে, অমনি কুঁকড়ো এক প্যাচ দিয়ে তাকে উলটে ফেললেন। হায়দারির নিজের কাটা তার নিজেরই বুকে কেটে বসল। হায়দারি পড়লেন। তার বন্ধুরা তাকে ধরাধরি করে উঠিয়ে নিয়ে পালাল। পাখিরা সব “হও ছুও” ক’রে তার পিছনে চলল। সোনালি আর জিন্ম কুঁকড়োর কাছে ছুটে এসে দেখলে, তিনি চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছেন।
জিন্ম বললে, “আমরা এসেছি বন্ধু, আমাদের সঙ্গে কথা কও”
সোনালি বললে, “আমি এসেছি একটিবার চেয়ে দেখো।”
কুঁকড়ো আস্তে-আস্তে চোখ মেলে বললেন, “ভয় নেই, কালও আবার সূর্য উঠবে, আলো ফুটবে।” এদিকে হায়দারিকে ‘তুও দিয়ে তাড়িয়ে সব পাখি কুঁকড়োকে ‘জয় জয়’ বলে খাতির করতে এল।
কুঁকড়ো রেগে হাকলেন, “ছুঁও মৎ, তফাত রও।”