পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৭৫

—আর সোনালির সবই এই বনের তলায় যেদিন দেখা দেবে, সেদিন তো কেউ-কাউকে ‘যেয়ে না বলে রাখতে পারব না; কেবল এইটুকুই সেদিন বলবার থাকবে— ভুলো না বন্ধু, মনে রেখো।”

 সে আর-একদিন; দুজনে অশোক-তলাটিতে দাঁড়িয়ে; সূর্য অস্ত গেছে; সন্ধ্যার পাখিদের গান বন্ধ হয়েছে; দু-একটা কাঠবেরাল তখনো পাতার মধ্যে উস্থুস করছে; খরগোসগুলো তাদের গড়ের বাইরে বসে একটু সন্ধের বাতাসে জিরিয়ে নিচ্ছে; বন আস্তে-আস্তে নিঝুম হয়ে আসছে। রাত্রির অন্ধকারে গাছ সব ক্রমে যেন মিলিয়ে গেল; সেই সময় ক্রমে-ক্রমে চাদের আলো ঘুমন্ত বনে এসে পড়ল। সে রাতের মতো বিদায় নেবার জন্তে সোনালি কুঁকড়োকে “আসি” বলতে গিয়েই দেখলে খরগোসগুলো চোখ প্যাট-প্যাট করে তাদের দিকে দেখছে। অমনি এক ডানার ঝাপটায় সোনালি তাদের তাড়িয়ে দিয়ে বললে, “আসি তবে।” কুঁকড়ে বললেন, “দেখো, মনে রেখে।” সোনালি বিদায় নিয়ে অশোক ফুলের গাছে তার মনোমত ডালটির উপরে উড়ে-বসতে ফিরে দাড়িয়েছে, এমন সময় পায়ে তার কী-একটা ঠেকল। “ইস্ ব'লে সোনালি সরে দাড়িয়ে দেখলে কী, সে তো কিছু বুঝতে পারলে না। কুঁকড়ো কাছে এসে দেখে বললেন, “সর্বনাশ, এ যে ফাঁদ পাতা রয়েছে। কে এখানে ফাদ পাতলে?” টুক্‌টুক্‌টুক্‌তিনবার আওয়াজ দিয়ে সবুজ ফতুয়ালাল-টুপিটি মাথায় কাঠঠোকরা কোটর থেকে বেরিয়ে বললেন,“ফাঁদটা বঁচিয়ে চোলো, ওই গোলাবাড়ির মানুষটিই ফাঁদ পেতেছে,সোনালিয়াকে ধরবে ব'লে।” “আমাকে ধরা তার কর্ম নয়।”—ব’লে সোনালি মাথা ঝাড়া দিলে। কাঠঠোকরা বলল, “শুনলুম সে তোমাকে ধরে পোষ মানাবে।” কড়ো বললেন, “তিনি খুব ভালো লোক, যদি তুমি ধরা পড়তে,তবে তোমাকে তিনি কষ্ট দিতেন না, এটা আমি ঠিক বলতে পারি।” সোনালি বললে, “কষ্ট না দিন, কিন্তু প্রাণ থাকতে সোনালি তার পোষ মানত না, সেটাও ঠিক।”

 ফাঁদ পাতা হলে বনের সবাই সরাইকে সাবধান না ক’রে নিশ্চিন্ত হতে পারে না, তাই খরগোস এসে বললে, “দেখো, খবরদার ওই কলটাতে যেন পা দিয়ে না; ছুয়েছ কি —”

 “বোকো না তুমি। ফাঁদে যে আটকায় কেমন-ক’রে তা আমি খুব জানি। এক কুকুর ছাড়া আর কাউকে আমি ডরাই নে। ঘরে যাও, ঠাণ্ডা লাগবে।”—ব’লে সোনালি আস্তে ডানার ঝাপট