পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
আলোর ফুলকি

দিয়ে খরগোসকে বিদায় ক’রে কুঁকড়োকে বললে, “আমি একবার গোলাবাড়ির দিকে যাচ্ছি।”

 কুঁকড়ো ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন, “কেন। কেন। সেখানে কেন।” “ও-দিককার কুকুরগুলোকে একটু দৌড় করিয়ে আসি। এই এক-পা এখানে, এক-পা ওখানে, যাব আর আসব, দেরি হবে না।”

 সোনালি চলে গেল, কুঁকড়ো অনেকক্ষণ সেদিকে চেয়ে থেকে, গাছের উপর কাঠঠোকরাকে শুধালেন, “সোনালিকে দেখতে পাচ্ছ কি।” কাঠঠোকরা উচু ডাল থেকে গলা বাড়িয়ে দেখে বললেন, “ন, তিনি গেছেন।” কুঁকড়ো বললেন, “তুমি ভাই, একটু নজর রেখে তো, সে আসছে কি না। আমি একবার গোলাবাড়ির চড়াইটার সঙ্গে কথা কয়ে নিই।”

 কাঠঠোকরা আশ্চর্য হয়ে ব’লে উঠল, “চড়াই না তোমার শত্রু?”

 কুঁকড়ো বললেন, “কিন্তু খবর দিতে আর তার মতো ছটি নেই। খবর যা চাও, তার কাছে পাবে।”

 “চড়াই আসছেন নাকি।” কাঠঠোকরা শুধলে।

 কুঁকড়ো বললেন, “না। এই দেখে-না তাকে ফোঁ করি। এই যে নীল ধুঁতরো ফুলটা দেখছ, এর সঙ্গে মাটির মধ্যে দিয়ে তারের মতো সরু শিকড় দিয়ে গোলাবাড়ির পুকুরধারে শ্বেত ধুঁতরো ফুলের যোগ আছে। ফুলের ভাষা ব’লে কবিতার বইয়ে পড়েছ তো। একেই বলে ফুলে-ফুলে কানাকানি।”

 বনের মধ্যে যে এমন কল আছে কাঠঠোকরা তা জানত না। ফোঁ কেমন, দেখতে সে ব্যস্ত হল। কুঁকড়ো ফুলের মধ্যে মুখ দিয়ে ডাকলেন, “হ্যালো।” খানিক ঘর-ঘর শব্দ হল – “হ্যালোচড়াই। গোলাবাড়ি।” কাঠঠোকরা বলে উঠল,“কুঁকড়ো ভাই,তোমার তো সাহস কম নয়। বাসার একেবারে দরজায় দাড়িয়ে কথা-চালাচালি। সোনালি টের পেলে—।”

 কুঁকড়ো বললেন, “সেখান থেকে যখন কথা আসবে তখন এই ফুলের মধ্যে যে মৌমাছিটা আছে, সে জেগে উঠবে আর—।”

 বোঁ-ওঁ-ও শব্দ হল। অমনি কুঁকড়ো ফুলে কান দিয়ে “চড়াই নাকি” বলে খানিক আবার শুনে বললেন, “ও তাই নাকি। আজ সকালে—।”