পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
আলোর ফুলকি

 কুঁকড়ো বললেন, “দিমের চেয়েও বড়ো আলোর হুকুমে আমায় চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সোনালি...।”

 সোনালি গাছের তলায় মরা স্বপনপাখিটি দেখিয়ে বললে, “এও যেমন আর গাইবে না, তেমনি তোমার মনের সুরটি কোনোদিন আর ফিরে আসবে না।” ঠিক এই সময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে বনের শিয়রে স্বপনপাখি ডাক দিলে, “পিয়ো পিয়ো।” ঠিক সেই গাছটির উপর থেকে যার তলায় রাতের স্বপন এখনো পড়ে আছে ধুলোয়। কুঁকড়ো উপর দিকে চেয়ে শুনলেন যেন আকাশবাণী হল, “শেষ নেই, শেষ নেই, বনের স্বপন অফুর।”

 কুঁকড়ো আনন্দে বলে উঠলেন,”অফুর স্বর, অশেষ স্বপন।” সোনালি বললে, “তোমার বিশ্বাস কি এখনো অটল থাকবে। দেখছ না সূর্য উঠছেন।” কুঁকড়ো বললেন, “কাল যে গান গেয়েছি তারি রেশ আকাশে এতক্ষণ বাজছিল সোনালি।”

 এমন সময় পেচাগুলো চেচিয়ে গেল, “আজ কুঁকড়ো গায় নি, কী মজা।” “ওই শোনে, সোনালি,পেচার স্পষ্টই জানিয়ে গেল যে, আলো আজ দেওয়া হয় নি। তাই আনন্দ করছে তারা।” বলে কুঁকড়ো সোনালির কাছে গিয়ে বললেন, “সকাল আমিই আনি। শুধু তাই নয়, বাদলে যখন পাহাড়তলিতে দিনরাত ঘন কুয়াশা চেপে এসেছে, দিন এল কি না বোঝা যাচ্ছে না, সেই-সব দিন আমার সাড়া সূর্যের জায়গাটি নিয়ে সবাইকে জানায় ‘দিন এল, দিন এল রে, দিন এল’”

 সোনালি কী বলতে যাচ্ছিল,কুঁকড়ো তাকে বললেন,”শোনে।” সোনালি দেখলে, কুঁকড়ো যেন কতদূরে চেয়ে রয়েছেন, চোখে তার এক আশ্চর্য আলো খেলছে। কুঁকড়ো আস্তে আস্তে বললেন, যেন মনে-মনে, “দূর সূর্যলোকের পাখি আমি। তাই না আমি ডাক দিলে নীল আকাশ ছেয়ে জ্বলে ওঠে সন্ধ্যার অন্ধকারে রাত্রির গভীরে আলোর ফুলকি। আমার দেওয়া আলে। কোনোদিন কি নিভতে পারে। না আমার গান বন্ধ হতে পারে? কতদিন গাচ্ছি, কতদিন যে গাইব তার কি ঠিকানা আছে। যুগ যুগ ধরে এমনই চলবে...। আমার পর সে, তার পর সে গেয়ে চলবে— আমারি মতো অটল বিশ্বাসে। শেষে একদিন দেখা যাবে আকাশের নীল, তারায় তারায় এমনি ভরে উঠছে যে রাত আর কোথাও নেই, সব দিন হয়ে গেছে— আলোয়