পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোচিন
৯৭

হয় যেন আমি এখন আর ভারতের মধ্যে নাই;—এমন কি, মনে হয়, প্রাচ্যভাব যেন এখান হইতে একেবারেই অন্তর্হিত হইয়াছে। যেন লাইড্‌ কিংবা আমষ্টার্ডামের রাস্তার একটা টুক্‌রা স্থানচ্যুত হইয়া এখানে আসিয়া পড়িয়াছে;—কেবল, গ্রীষ্মপ্রধান দেশের প্রখর উত্তাপে উহা তাপদগ্ধ হইয়াছে,—ফাটিয়া গিয়াছে। বেশ মনে হয়, ওলন্দাজেরাই সহরের এই ভাগটি নির্ম্মাণ করিয়াছে; কেন না, সেই যুগের ওলন্দাজেরা, আপনাদের নিজের দেশেও, জলবায়ুভেদে কিরূপ গৃহ নির্ম্মাণ করিতে হয়, তাহা জানিত না। তাহার পর, ওলন্দাজেরা এ দেশ হইতে চলিয়া গেলে, ক্র্যাঙ্গানোরের ইহুদিরা সেই সব শূন্যগৃহ অধিকার করে। এখানে কেবলি ইহুদি—ইহুদি ছাড়া আর কিছুই নাই। এই সব ইহুদিগের রং ফ্যাকাশে; ভারতের জলবায়ুপ্রভাবে এবং খুব-ঘেঁষাঘেঁষি বাড়ীতে বাস-করা-প্রযুক্ত, ইহারা রক্তহীন হইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু দ্বিসহস্রবৎসরকাল ম্যালাবার-প্রদেশে বাস করিয়াও উহাদের মৌলিক ছাঁচ কিছুমাত্র রূপান্তরিত হয় নাই;—এমন কি, (প্রচলিত মতের উল্টা) উহাদের মুখ তাপদগ্ধ হইয়া একটুও মলিন হয় নাই। জেরুশালেমে, কিংবা তিবেরিয়াদে যেরূপ মূর্ত্তি—যেরূপ লম্বা আলখাল্লা সচরাচর দেখা যায়,—এখানেও ঠিক্‌ তাই। যুবতীদের সূক্ষ্মচারু মুখশ্রী; দীনদর্শন বৃদ্ধদিগের শুকচঞ্চুবৎ বক্র নাসিকা; শিশুদিগের শাদা ও গোলাপি রং; রসপ্রধান দৈহিক প্রকৃতি—মুখে একটু ধূর্ত্তামির ভাব পরিস্ফুট, —“কাননে”র জাত্‌-ভাইদিগের মত, ইহাদেরও কানের উপর চুলকোঁক্‌ড়াইবার কাগজ রহিয়াছে।

 রাস্তা দিয়া যদি কোন বিদেশী পথিক চলিয়া যায়, অমনি তাহাকে দেখিবার জন্য, এই সকল লোক দ্বারদেশে নামিয়া আসে; কেন না, মাতাঞ্চেরিতে বিদেশী লোক প্রায় কখন আইসে না। বিদেশী দেখিলেই, উহাদের মুখে স্মিতহাস্য ও আতিথ্যের ভাব ফুটিয়া উঠে। যে-কোন গৃহেই