পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোচিন।
১০৩

মন্দিরটি সর্ব্ব্বাপেক্ষা আদিম ও উগ্রদর্শন। তা ছাড়া, এরূপ দুর্গম যে, বলা বাহুল্য, আমি উহার নিকটে ঘেঁষিতে সাহস করি নাই। সূর্য্যকরোজ্জ্বল প্রাঙ্গণ—শূন্য, শোকগম্ভীর;—উত্তপ্ত প্রস্তররাশির মধ্যে, লৌহ ও তাম্র-গঠিত কতকগুলা অদ্ভুত সামগ্রী খাড়া হইয়া রহিয়াছে;—এইগুলি বহুশাখাবিশিষ্ট একপ্রকার দীপাধার;—বহুশতাব্দীব্যাপী ঝঞ্চাবাতের প্রভাবে উহাতে মর্চ্চে ধরিয়াছে।

 পার্শ্বে ই কোচিন-রাজাদিগের পুরাতন প্রাসাদ। সরু-সরু দীর্ঘ ঢাকাবারাণ্ডার পথ দিয়া মন্দিরের মধ্যে যাওয়া যায়। কিছুকাল হইল, কোচিন-রাজারা এই প্রাসাদ ত্যাগ করিয়া, অপরকুলস্থ এর্‌নাকুলমের নূতন আবাসগৃহে উঠিয়া গিয়াছেন। এই প্রাসাদটি দেখিলে মনে হয়—একটা গুরুভার চতুষ্কোণ পুরাতন দুর্গ। ইহার নির্ম্মাণকাল ঠিক নির্ণয় করা অসম্ভব;—বিশেষত এই প্রদেশে, যেখানে গল্প ও রূপকের সহিত ইতিহাস মিশিয়া গিয়াছে। যাহাই হউক, প্রাসাদটি দেখিলে, অতি পুরাকালের ভাব মনোমধ্যে অঙ্কিত হয়। দ্বারদেশে আসিবামাত্র মনে হয়, কি-যেনএকটা অজ্ঞাতপূর্ব্ব প্রবলপরাক্রম অনার্য্য বর্ব্বরদেশে প্রবেশ করিতেছি। খুব্‌রি-কাটা ছোটছোট কত গবাক্ষ; নীচে প্রস্তর হইতে খুদিয়া-বাহির করা কত আসনবেদিকা;—ইহাতেই বুঝা যায়, ইমারতের মালমসল্লা কতটা ঘন-সন্নিবিষ্ট। সমস্ত সিঁড়ি—অমন কি,—যে সিঁড়িটি দিয়া দরবারশালায় উঠা যায়, তাহাও অতি সঙ্কীর্ণ, তমসাচ্ছন্ন, শ্বাসরোধী;—একজনমাত্র উঠিতে পারে, এরূপ পরিসর; উহাদের নির্ম্মাণে কি-যেনএকটা শিশুসুলভ বর্ব্বরতা লক্ষিত হয়। বড়-বড় দালানঘর খুব দীর্ঘ, নীচু, “অন্ধকেরে"—কারাগারের মত কষ্টজনক।

 ঘরে চাঁদোয়া-ছাদগুলা খুব নীচু—খুব কাজ-করা—দুর্লভ কাষ্ঠে নির্ম্মিত;—কোথাও ঘর-কাটা নক্সা, কোথাও গোলাপ-পাপ্‌ড়ির নক্সা, কোথাও থিলান-কাটা নক্সা,—সমস্তই মলিন, কোন-কোন অংশ