পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

রংদিয়া চিত্রিত। আবার এদিকে দেয়ালগুলা একেবারে সমতল—এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত একসমান;—অর্ধ-অন্ধকারের মধ্যে প্রথমদৃষ্টিতে মনে হয়, দেয়ালগুলা বুঝি নানারঙের রঙিন কাপড়ে মোড়া; কিন্তু আসলে তাহা নহে,—উহাতে নানা রঙের ছবি চিত্রিত হইয়াছে। প্রাসাদের সৰ্বত্রই, দেয়ালের গায়ে এইরূপ বর্ণচিত্র;—কোথাও বা কালপ্রভাবে নষ্ট হইয়া গিয়াছে, কোথাও বা সমাধিমন্দিরস্থ বর্ণচিত্রের ন্যায় অক্ষুন্ন রহিয়াছে।

 দেয়ালের এই বর্ণচিত্রগুলি দেখিলে বিস্ময়ে স্তম্ভিত হইতে হয়;ইহাতে একটি বিশেষ কলানৈপুণ্য প্রকাশ পায়। কি শাখাবহুল প্রাচুর্য্য! কি উদ্দাম বিলাসলীলা! রাশি-রাশি নগ্নমূর্ত্তি,—ভারতরমণীর রূপ অতিরঞ্জিতভাবে চিত্রিত হইলেও, মানবদেহপঞ্জরের সমস্ত খুঁটিনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুকৃত হইয়াছে। কটিদেশ অতীব ক্ষীণ, বক্ষোদেশ অতীব পরিপুষ্ট ও প্রলম্বিত। সুগোল বাহু, সুবক্র নিতম্ব, অতি পীন পয়োধর—এই সমন্তের ছড়াছড়ি-জড়াজড়ি;—উহার মধ্যে কোনপ্রকার শৃঙ্খলা নাই। হস্তে বলয়, পায়ে নূপুর; ললাটে সিথি, কণ্ঠে হার। এই সব মূর্ত্তির সহিত পশুমূর্ত্তিও মিশ্রিত।

 কোথাও একটি আস্বাব নাই;—সমস্তই শূন্য। সমস্ত দেয়াল বর্ণচিত্রে আচ্ছন্ন—এ ছাড়া আর কিছুই নাই। যে ঘরগুলা পরিত্যক্ত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন-সেখানেও এই মানবমূর্তি ও পশুমূর্তির ছড়াছড়ি। মাঝের ঘরটি খুব বিশাল-খুৰ উচ্চ; এইখানে রাজাদিগের অভিষেক-অনুষ্ঠান হইয়া থাকে। এই ঘরের দেয়ালে যে-সব কিরণমণ্ডলভূষিত সারি-সায়ি দেবীমূর্ত্তি—উহারা আসন্নপ্রসবা এবং অসংখ্য বিবস্ত্র দর্শকের মধ্যে অবস্থিত।

 রাজাদের শয়নকক্ষটিতে এখনো কিছু কিছু আব আছে—নৌকাআকৃতি, দুর্লভ কাষ্ঠে নির্মিত একটি পর্য্যঙ্ক,—তাহাতে জরির রেশ্‌মি গদি —লাল রেশ্‌মি রঞ্জু দিয়া দোয়া-ছাদে লট্‌কান। ভোজনান্তে রাঙ্গাকে