পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোচিন।
১০৫
ঘুম পাড়াইবার জন্য ভৃত্যের এই পর্যাঙ্কটি দোলাইরা থাকে। এই রাজশয্যার চতুর্দিকে, প্রাচীরের বর্ণচিত্রগুলিতে নিরঙ্কুশ লাম্পট্যলীল প্রকটিত। দেবদেবী, মানব, পশু, বানর, ভল্লুক, হরিণ-সকলেরই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কামাবেশে সবেগে আক্ষিপ্ত, চক্ষু উন্মত্তের ন্যায় বিস্ফারিত, আবেশভরে পরম্পরকে জাপাইয়া ধরিয়াছে—পরস্পরের সহিত জড়াজড়ি করিয়া আছে। একটা পিছনের ঘর—অতিব্যবহারে মলিন ও হতশ্রী সেখানে দিবারাত্রি একটা পিতলের দীপ জলিতেছে ও ধূমায়িত হইতেছে-:এ ঘরটিতে আমার পদার্পণ করিবার অনুমতি নাই—কেন না, উহারি প্রান্তভাগ—সেখানটা অন্ধকার—সেইখান দিয়া মন্দিরে যাইবার পথ।”

 মধ্যাহ আসন্ন। এখন একটা গৃহের মধ্যে আশ্রয় লওয়া নিতান্তই আবশ্যক। আমার ছায়াচ্ছন্ন দ্বীপটি এখান হইতে বেশি দূরে। এখন আমি কোচিনে গিয়া কোনো পান্থশালায় আশ্রয় লইব।

 দুইটি চটুল -অশ্ব-যোজিত একটা ক্ষুদ্র ভাড়াটে গাড়ি করিয়া আবার আমি মাতাঞ্চেরির ভারতীয়-ধরণের রাস্তা দিয়া চলিতে লাগিলাম। আজ প্রাতে যেখানে ম্যালাবারের বিভিন্নবেশধারী নানাজাতীয় লোক পিপীলিকার সারির ন্যায় চলিতেছে দেখিয়াছিলাম—সেইখানে এখন মধ্যাহের নিষ্পন্দতা।

 সেখান হইতে শীঘ্রই কোচিনে পৌছিলাম। এক দিকে বিল, অপর দিকে সমুদ্র—ইহারই মাঝখানে, বালুভূমির উপর, কোচিন স্থাপিত;পুরাতন ঔপনিবেশিক নগর—একটু স্থাবরভাবাপন্ন—এখনো যেন সেখানে ওলন্দাজি ছাপ মুদ্রিত। যে ক্ষুদ্র গৃহে আমি আশ্রয় লইয়াছি, সেখান হইতে সমুদ্রের বেলাভূমি পরিদৃশ্যমান-বিরাট-অনন্ত পরিদৃশ্যমান।

 আমার সম্মুখে সেই নীল মহাসমুদ্র,আরবসাগর। মাথার উপর মধ্যাহ্সূর্য্য—তাহার প্রখর কিরণে বালুকারাশি ও তটভূমি একপ্রকার শুভ্র ও গোলাপি রঙে উদ্ভাসিত। কাকচীলেরা চীৎকার করিয়া আকাশে '