পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

লইয়া, চিত্র বিচিত্র নক্সার আকাকে সেই গুড়া ছড়াইয়া দিতেছে। এই সাদা নক্সাগুলি এমন সুন্দর, এবং নকসার প্রত্যেক সন্ধিস্থলে, হলদে ফুল এমন সুন্দরভাবে সন্নিবেশিত যে, রাস্তায় চলিতে আর সাহস হয় না। কিন্তু এইবার বাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়াছে; তাহার সঙ্গে লাল ধূলাও উড়িয়াছে। ভারতের এই দক্ষিণপ্রদেশে এই ধূলায় সব জিনিষ লাল হইয়া যায়। লোকেরা যে এত ধৈর্য্য ধরিয়া চিত্র বিচিত্র রঙে ভূমি রঞ্জিত করিল, এখন ইহার আর কিছুই থাকিবে না।

 নগরের বাড়ীগুলিতে লাল ইটের রং। গৃহ-দ্বারের উপর ত্রিশূল-চিহ্ন অঙ্কিত—সমস্তই খুব নীচু। মোটা-মোটা খাটো দেয়াল, পোস্তা-গাঁথুনি, খিলান-গাঁথুনি,–এই সমস্ত, ফ্যারোয়া’দিগের মিসর-দেশকে মনে করাইয়া দেয়। এখানে মনুষ্যালয় অপেক্ষা দেবালয়ই অধিক। প্রত্যেক দেবালয়ের সম্মুখস্থ ত্রিকোণাকার গাঁথুনির উপর ছোট ছোট লালচে রঙ্গের বিকটাকার মূর্তি সন্নিবেশিত, এবং তাহাদিগের সঙ্গে এক-ঝাক দাঁড়কাক বসিয়া আছে। তাহারা পান্থাদিগের গতিবিধি নিরীক্ষণ করিতেছে;—কিরূপ শীকার জোটে, পচা-বসা কিরূপ জিনিষ মেলে তাহারই জন্য অপেক্ষা করিতেছে; এই চিরঅবারিত-দ্বার প্রত্যেক দেবালয়ের অভ্যন্তরে এক একটি ভীষণ মূর্ত্তি অধিষ্ঠিত; গজমুণ্ডধারী গণেশের মূর্ত্তিই প্রায় সর্ব্বত্র দেখিতে পাওয়া যায়। টাটটা হলদে ফুলের রাশি-রাশি মালা তাঁহার কণ্ঠে বুলিতেছে;—এই সকল মালায় তাহার চারিটি বাহু ও লম্বমান শুণ্ডটি ঢাকিয়া গিয়াছে।

 মন্দিরের পর মন্দির; ব্রাহ্মণদিগের স্নানার্থ পুণ্য পুষ্করিণী; প্রাসাদ; বাজার। মুসলমানের মজিদও এই তাল-নারিকেলের দেশে অল্প-স্বল্প প্রবেশ-লাভ করিয়াছে। এক সময়ে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য-দেশে মুসলমানধর্ম্মের জয়-পতাকা উড্ডীন হইয়াছিল—ইহাই বোধ হয় তাহার কারণ। মসজিগুলি সাদাসিধা; গায়ে, আরবীয় শিল্পরীতির অনুযায়ী না-কাটা, সরু-সৰু “মিনারের মাঝখান হইতে উহা আকাশ ফুড়িয়া