পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

কিন্তু এখন এখানে কেবলই নিস্তব্ধতা, তিমির-ছায়া, হরিৎস্ময়ী রজনীর পূর্ণ আবির্ভাব। মানুষ চলিয়া গিয়াছে, অরণ্য ইহার চারি দিক, বেষ্টন করিয়াছে।

 পৃথিবীর সুদূর অতীতে, সেই আদিম মহারণ্যের উপর যেরূপ প্রশান্তভাবে প্রভাতের অভ্যুদয় হইত, এই সদ্যোবিনষ্ট নগরীর ধ্বংসাবশেষের উপর এক্ষণে সেইরূপ প্রশান্ত প্রভাত সমুদিত।

 * * * * 

 ভারত-মহাদেশে পদার্পণ করিধার পূর্ব্বে, সিংহল দ্বীপের কোন সদাশয় পরম-কৃপালু মহারাজাব নিকট হইতে প্রত্যুত্তরের অপেক্ষায় আমাকে কিছুদিন এখানে থাকিতে হইল। আমি তাহার বাটীতে অতিথি হইয়া থাকিব, এইরূপ কথা ছিল। যতদিন না সেই উত্তর পাই, ততদিন এই স্থানেই থাকিব, স্থির করিলাম; কেন না, উপকূলবর্তী সাৰ্বজাতিক নগরগুলির প্রতি আমার আন্তরিক বিতৃষ্ণা।

 যে পথটি ধরিয়া, আমি এখানে আসিয়াছি, তাহার আলোচনা ও উদ্যোগ-আয়োজন অনেকদিন হইতেই চলিতেছিল। এই স্থানের শোভা সৌন্দর্য্য উপভোগের পক্ষে এই পথটিই সর্বাপেক্ষা অনুকূল।

 “কান্দি” হইতে পূর্বাহ্নেই ছাড়িতে হইল। এই কান্দি নগর প্রাচীন সিংহল-রাজদিগের রাজধানী ছিল। যাত্রার আরম্ভভগে, সুপারিনারিকেল-ভূমিষ্ঠ প্রদেশের মধ্য দিয়া চলিতে লাগিলাম। বিষুব-রেখাবর্ত্তিপ্রদেশ-সুলভ প্রাকৃতিক প্রাচুর্য্য আমার সম্মুখে এক্ষণে পূর্ণরূপে উদ্ঘাটিত হইল। তাহার পর অপরাহ্নে, দৃশ্যের পরিবর্তন হইল। নারিকেল ও সুপারির প্রসারিত শাখা-পক্ষরাজি অল্পে অল্পে দৃষ্টিপথ হইতে তিরোহিত হইল। আমরা এইক্ষণে নাতি-উষ্ণ-প্রদেশ-সীমায় আসিয়া পড়িয়াছি। এখানকার অরণ্য, অনেকটা অস্মদ্দেশের অরণ্যের ন্যায়। .

 অজস্রধারে বৃষ্টি পড়িতেছে; বৃষ্টির জল উষ্ণ ও মুরভিত; ভিজা